দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দাম্পত্য কলহের জেরে নিজের ৫ বছর বয়সী ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্ত্রীকে ফাঁসানোর অভিযোগে আবদুল্লাহ আল এলিন (৩২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার পালশা ইউনিয়নের চাটশাল সোনারপাড়া গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে ছেলেকে অপহরণের দায়ে গতকাল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন আবদুল্লাহর স্ত্রী বাবলী খাতুন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আবদুল্লাহকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার আবদুল্লাহ ঘোড়াঘাট উপজেলার পালশা ইউনিয়নের চাটশাল সোনারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিরামপুর পৌর শহরের থানাপাড়া মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে বিরামপুর পৌর শহরের থানাপাড়া মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ আল এলিনের সঙ্গে ঘোড়াঘাটের চাটশাল সোনারপাড়া গ্রামের বাবু মিয়ার মেয়ে বাবলী খাতুনের (২৩) বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাঁদের একটি ছেলেসন্তান হয়। সংসার চলাকালে বাবলী জানতে পারেন, তাঁর স্বামী তাঁকে বিয়ের আগে অন্যত্র একটি বিয়ে করেছিলেন, সেখানে স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়েছে এবং সেই পক্ষের ঘরে একটি ছেলেও আছে। বাবলীর অভিযোগ, আবদুল্লাহ বিভিন্ন সময় তাঁকে বাবার বাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আনতে চাপ দিতেন। এ নিয়ে প্রায় সময় তাঁদের কথা–কাটাকাটি হতো এবং আবদুল্লাহ বাবলীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে বাবলী নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে চলে যান। পরবর্তী সময়ে বাবলীর স্বামী শ্বশুরবাড়ির এলাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে বাবলীকে নিয়ে বসবাস করেন। কিছুদিন পর আবার বাবলীকে বাবার বাড়ি থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আনতে চাপ দেন আবদুল্লাহ। বাবলী রাজি না হওয়ায় তাঁকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। গত নভেম্বর মাসে বাবলী স্বামীর সংসার ছেড়ে ছেলে রাফিনকে (৫) নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আবদুল্লাহ দুই বন্ধু সাজু মিয়া (৩০) ও অপু মিয়াকে (৩০) নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির সামনে যান। তাঁরা বাড়ির বাইরে থাকা ছেলেকে সবার অগোচরে অপহরণ করেন এবং বিরামপুর পৌর শহরের থানাপাড়া মহল্লায় তার (রাফিন) দাদার বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। ছেলেকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে বাবলী স্বামীর কাছে ছেলের বিষয়ে একাধিকবার জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। পরে গতকাল সকাল ১০টায় বাবলী ঘোড়াঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ঘোড়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হরিদাস বর্মনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল বিরামপুর থানা–পুলিশের সহযোগিতায় রাফিনের দাদাবাড়ি থেকে রাফিনকে উদ্ধার করে এবং আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে।
ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শিশু অপহরণের অভিযোগে শিশুর বাবা আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি তাঁর স্ত্রী, শ্বাশুড়ি ও শ্যালিকাকে হয়রানি করতেই আসামি ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। আজ দুপুরে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিশুটিকে তার মায়ের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। মামলার বাকি চার আসামি পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।