প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো দেওয়ানের সেতু ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো দেওয়ানের সেতু ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সম্প্রতি

মোগল আমলের সেতুতে কোপ

ঐতিহ্যের স্বার্থে সেতুটি অক্ষত রেখে বিকল্প সেতু নির্মাণ করা যেত কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে। এলাকাবাসী অনেকে ক্ষুব্ধ।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ‘দেওয়ানের পুল’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেতু পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ করতে গিয়ে মোগল আমলে নির্মিত পুরোনো সেতুটি ভাঙা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। স্থানীয় লোকেরা বলছেন, সেতুটি সংরক্ষণ করা উচিত ছিল।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২০০ বছর আগে সিলেটের তৎকালীন দেওয়ানের (রাজস্ব কর্মকর্তা) নির্দেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকা দক্ষিণ এলাকার শ্রীচৈতন্যদেবের বাড়িমুখী সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এ সময় বাউশা এলাকার দেওরভাগা খালে একটি সেতুও নির্মাণ করা হয়। সেতুটিই ‘দেওয়ানের পুল’ নামে পরিচিতি পায়।

উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো সেতুটি ছিল ২০ ফুট দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থ। একই জায়গায় এখন ৯৯ ফুট দীর্ঘ ও ৩২ ফুট প্রস্থ সেতু নির্মাণ করা হবে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর সেতুর সংযোগ সড়কটিও প্রশস্ত করা হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সেতুটি চুন-সুরকি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভারী যানবাহন বহনের ক্ষমতা এটি হারিয়েছে। তাই নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি প্রাচীন কোনো ইমারত নয়, তাই দেখারও কিছু নেই বলে দাবি করেন তিনি।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানের পুল

ঐতিহ্যের স্বার্থে সেতুটি অক্ষত রেখে বিকল্প সেতু নির্মাণ করা যেত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সেতুর অবস্থান শতভাগ সোজা রাস্তায়। তাই বাঁকা করে বিকল্প সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই। এমনকি সেতুর তিনটি স্প্যান (পিলার) এমনভাবে আছে, যা দিয়ে সহজে বড় নৌকা চলাচল করতে পারে না।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, পুরোনো সেতুটি অক্ষত রেখে পাশে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা যেত। সেখানে আরেকটি সেতুর জন্য পর্যাপ্ত জায়গাও আছে। সেতুটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে ঐতিহ্য ধ্বংস করে উন্নয়নকাজ চলছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা মোগল আমলের স্থাপত্যটি সংরক্ষণের দাবি জানাই।’

লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন বলেন, সেতুর নিচের অংশ একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। তাই এটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি। তবে এখন যেভাবে সেতুটি সংরক্ষণের ব্যাপারে অনেকে সরব হয়েছেন, সেটা যদি সেতু ভাঙার আগে তাঁরা করতেন, তাহলে হয়তো পুরোনো সেতুটা অক্ষত রেখে পাশে নতুন সেতু নির্মাণের ব্যাপারে চিন্তা করা যেত। কিন্তু এখন তো সেতুর অনেক অংশ ভাঙা হয়ে গেছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।