অনেকটাই ফাঁকা বান্দরবান জেলা শহরের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র | গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায়
অনেকটাই ফাঁকা বান্দরবান জেলা শহরের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র | গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায়

বান্দরবানের পর্যটনে ‘শনির দশা’, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা কাটছে না

দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটিসহ ঈদের পাঁচ দিনের ছুটিতেও বান্দরবানে পর্যটক হাতে গোনা। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, যানবাহনের মালিক—সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আছেন; কিন্তু পর্যটকের দেখা নেই। ঈদুল আজহাতেও বান্দরবানে পর্যটক হাতে গোনা। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বান্দরবানে পর্যটনে এখন ‘শনির দশা’ চলছে।

প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি হওয়া সত্ত্বেও পর্যটকেরা বান্দরবানমুখী না হওয়ার কারণ হিসেবে সবাই একটাই বলছেন, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ও পরবর্তী পরিস্থিতি। নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। যদিও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই।

আজ রোববার দুপুরে জেলা শহরের নীলাচল, মেঘলা ও শহরতলির শৈলপ্রপাতসহ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা কয়েকজন পর্যটক রয়েছেন। তা-ও দিনে এসে বিকেলে ফিরে যাওয়াদের সংখ্যাই বেশি। মেঘলা পর্যটনের টিকিট কাউন্টারের সুকুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পর্যটকের সংখ্যা কম। প্রতিবছরের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে।

বেড়াতে আসা কেউ কেউ বলেছেন, বর্ষা মৌসুমে এমনিতে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো কঠিন। আবার রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি চলাচলে বিধিনিষেধ আছে। চট্টগ্রাম থেকে আসা তরুণ মো. লিমন ও মো. তানভির জানিয়েছেন, তাঁরা রুমার বগালেক, কেওক্রাডং, থানচির নাফাকুম, তিন্দু যেতে আগ্রহী, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতির কারণে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না।

হোটেল-মোটেল ও অবকাশযাপনকেন্দ্রগুলোতেও শূন্যতা বিরাজ করছে। আগাম ভাড়া (বুকিং) নেই জানালেন হোটেল হিলভিউর ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত রমজানের ঈদের চেয়েও এবারের অবস্থা খারাপ। ঈদের পরদিন পর্যটক আসার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। সে রকম হলে আগাম রুম ভাড়া থাকত। তাঁর হোটেলে চারটি কক্ষ আগাম ভাড়া হয়েছে।

জেলা শহরের প্রবেশমুখে মেঘলা পর্যটন মোটেল। সেখানে পর্যটকের আকাল জানালেন সহকারী ব্যবস্থাপক মো. যুবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, গত রমজানের ঈদেও পরিস্থিতি ভালো ছিল না, এবারের ঈদেও উন্নতি হয়নি।

জেলা ও উপজেলা শহরে শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্রে ছয় হাজারের বেশি পর্যটককে আবাসন সেবা প্রদান করা সম্ভব জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া রুমার বগালেক, কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় রোয়াংছড়ির লিরাগঁই, রৌনিনপাড়া ও থানচির নাফাকুম, তিন্দু, রেমাক্রিসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়িতে অতিথি হয়ে থাকেন শত শত পর্যটক।

পর্যটকশূন্য নীলচল পর্যটন কেন্দ্র। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায়

কেএনএফের আতঙ্কে এখন সেখানে যাওয়াও যাচ্ছে না। এই অবস্থায় হোটেলমালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, যানবাহনে নিয়োজিত লোকজন, কমিটি পর্যটনে নির্ভরশীল পরিবারসহ প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ আয় হারিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হোটেল আরণ্যকের মালিক জসীম উদ্দিন।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন বলেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে বান্দরবানের পর্যটনে শনির দশা কাটছে না। মহামারির পরিস্থিতি কেটে উঠতে না উঠতে কেএনএফের সন্ত্রাসী তাণ্ডব শুরু হয়েছে।

গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অপহরণ, অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া পর্যটকেরা ছিনতাই ও মারধরের ঘটনার শিকার হয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পর্যটনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আসিফ রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সবকিছু করা হয়েছে। ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ জন্য হোটেল-মোটেলসহ সবকিছুর প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যটক আগমনের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।