রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ভিজিএফের চাল না পেয়ে বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন লোকজন। শনিবার বিকেলে
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ভিজিএফের চাল না পেয়ে বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন লোকজন। শনিবার বিকেলে

গঙ্গাচড়ায় পুলিশি পাহারায় চাল বিতরণ শেষে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে দুস্থদের বিক্ষোভ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভিজিএফের অবশিষ্ট চাল বিতরণ শেষ করার পর ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছেন দুস্থরা। পুলিশি পাহারায় ইউএনওর উপস্থিতিতে আজ শনিবার দুপুরে এ চাল বিতরণ করা হয়। ঘটনাটি তদন্তে ইউএনও চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

এর আগে গত বুধবার ভিজিএফের চাল বিতরণকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করায় দুই কার্ডধারীকে মারধর করার অভিযোগ ছিল গ্রাম পুলিশ সদস্য লেবু মিয়াসহ ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ইউনিয়নে বরাদ্দ পাওয়া ৬ হাজার ৩২৩টি ভিজিএফ কার্ডের মধ্যে ৫ হাজার ৪৯৫ কার্ডের বিপরীতে চাল বিতরণ করা হয়। বাকি ৮২৮ কার্ডের চাল শনিবার বিতরণ করা হলো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১১টার মধ্যে অন্তত তিন হাজার মানুষ উপস্থিত হন। অবস্থা বেগতিক বুঝে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরী বেলা একটার দিকে চাল বিতরণ স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়ে ইউএনওকে তা জানান। কিন্তু ইউএনও নাহিদ তামান্না চাল বিতরণ করার নির্দেশনা দিয়ে তাৎক্ষণিক নিজেই ওই ইউপি কার্যালয়ে পুলিশসহ যান। এরপর ইউএনও-পুলিশের উপস্থিতিতে বেলা দুইটার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান অবশিষ্ট ৮২৮ কার্ডের চাল বিতরণ দেড় ঘণ্টায় শেষ করেন। কিন্তু তখনো চাল না পাওয়া হাজারো মানুষের হাতে ভিজিএফের কার্ড ছিল। এ সময় দুস্থরা চাল না পেয়ে কার্ড হাতে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরীকে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে ইউএনওর কাছে শাস্তির দাবি জানান।

পরে ইউএনও নাহিদ তামান্না হ্যান্ডমাইকে বিক্ষোভকারী দুস্থদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বক্তব্য দেন। ইউএনও বলেন, ‘আমি আপনাদের দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁদের হাতে কার্ড আছে, তাঁরা ঈদের পর প্রত্যেকে চাল পাবেন। আর এখানে চাল বিতরণকালে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় যে দুই কার্ডধারীকে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে, সেটার জন্য তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অবশ্যই অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ অন্যদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

ইউএনওর আশ্বাস পেয়ে পরে দুস্থরা শান্ত হয়ে কেউ কেউ বাড়িতে ফিরে গেলেও অনেকে সেখানেই থেকে যান। পরে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরী পুলিশি পাহারায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ত্যাগ করেন। এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও গাড়িতে উঠলে তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে পুনরায় ইউপি চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবি জানান বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা।

উপজেলার মন্থনা বালাপাড়া গ্রামের দুস্থ লিলি বেগম (৪৫) ইউএনওকে অভিযোগ করে বলেন, ‘কার্ড হাতোত নিয়া তিন দিন থাকি ঘোরোছি স্যার। তা-ও চাউল পাইনো না। এই চাউল পাইলে ছিন্নির (ঈদ) দিন ছইল-পইল (সন্তানদের) নিয়া খাবার পাইনো হয়।’

ইউএনওর গাড়ি আটকে ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগীরা

ইউএনও নাহিদ তামান্না শনিবার রাতে জানান, ওই ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ পাওয়া সব ভিজিএফ কার্ডের চাল বিতরণের পরও অন্তত দুই হাজার মানুষের হাতে কার্ড ছিল। এই কার্ডগুলো বিতরণের সময় হয়তো হিসাব-নিকাশে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ভুল ছিল। এ কারণে বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত কার্ড মানুষের হাতে তাঁরা বিতরণ করে ফেলেছেন। যাহোক, যাঁদের হাতে প্রকৃত কার্ড আছে, তাঁদের প্রত্যেককে চাল কিনে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দিয়েছেন। ঈদের পর ১৯ জুন চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যদের তাঁর কার্যালয়ে ডেকেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সেখানে চাল দেওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তিনি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামানকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজীবুল করিম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম। এ কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ওই প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ চৌধুরী বলেন, কিছু ভিজিএফ কার্ড ‘ডুপ্লিকেট করে’ ইউপি সদস্যরা বিতরণ করেছেন। এ কারণে বরাদ্দ পাওয়া সব কার্ডের চাল বিতরণ করার পরও হাজার দু-এক মানুষের হাতে কার্ড রয়ে গেছে। কার্ড কিংবা চাল বিতরণে তিনি কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করেননি। কমিটি তদন্ত করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

থানা-পুলিশ জানায়, গত বুধবার ভিজিএফের ওই চাল বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় দুই কার্ডধারী মিলন চন্দ্র রায় ও যামিনী রায় মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘গঙ্গাচড়ায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম, প্রতিবাদ করায় দুজনকে মারধর’ শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন এবং পরদিন ‘গঙ্গাচড়ায় চাল বিতরণ, অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’ শিরোনামে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়।