সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন গৃহকর নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে করণীয় ঠিক করতে নাগরিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা ডাকে এই কর্তৃপক্ষ। সভা শুরুর কিছুক্ষণ পর এক নাগরিকের বক্তব্য চলাকালে একজন কাউন্সিলর মাইক কেড়ে নিয়ে বাধা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। প্রায় ১৫ মিনিট পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার সভা শুরু হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের আরামবাগ এলাকার আমান উল্লাহ কনভেনশন সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ৮টার দিকে নগরের পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডে চালু হওয়া নতুন গৃহকর নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট ও রি–অ্যাসেসমেন্ট বিষয়ে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
এর আগে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত বার্ষিক গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। এরপর নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিলের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ১২ মে দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে পর্যালোচনার মাধ্যমে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। মেয়র তখন বলেন, গৃহকর নিয়ে আপত্তি থাকলে ভুক্তভোগীরা নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সিটি করপোরেশনে আপত্তি জানাতে পারবেন। পরে রিভিউ বোর্ড তাঁদের বিষয়টি শুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নিষ্পত্তি করবে। তবে আন্দোলনরত ব্যক্তিরা পর্যালোচনার বদলে নতুন গৃহকর বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
নাগরিকদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের ডাকা মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল)। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর) আসনের সংসদ সদস্য রঞ্জিত চন্দ্র সরকার, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান (হাবিব) ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমা চক্রবর্তী।
সভায় উপস্থিত একাধিক নাগরিক বলেন, মতবিনিময় সভার শুরুতে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান নতুন গৃহকরের সিদ্ধান্ত কোন পদ্ধতি এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে কথা বলছিলেন। তাঁর বক্তব্যের মিনিট দশেক পর সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক প্রবীণ নাগরিক নতুন গৃহকর আরোপ কোন পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছে, তা ব্যাখ্যা না করে কয়েক শ গুণ কোন যুক্তিতে বাড়ানো হলো এবং এ সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে কি না, এ নিয়ে জানতে চান।
এ সময় মাইক হাতে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম (দীনেশ) উপস্থিত নাগরিকদের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। তখন সেখানে গিয়ে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওই ব্যক্তির মাইক কেড়ে নেন। ওই কাউন্সিলর তখন আমিনুলের উদ্দেশে বলতে থাকেন, আগে মেয়রসহ সবার কথা শুনতে হবে। এরপর কোনো কথা থাকলে বলা যাবে। কাউন্সিলরের এমন বক্তব্যের পরপরই উপস্থিত নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে হট্টগোল শুরু করেন। পরে মেয়রের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আমিনুল ইসলামের মাইক কেড়ে নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তিনি মাইক ছিনিয়ে নেননি। কেবল ওই ব্যক্তিকে (আমিনুল) বলেছেন, যেহেতু একজন (প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা) বক্তব্য দিচ্ছেন; তাই ওই বক্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনার পর যেন তিনি (আমিনুল) বক্তব্য দেন।
সভাপতির বক্তৃতায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদ কাজ করবে। কাউন্সিলরদের নিয়ে সাধারণ সভা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় জরুরি সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে।
গৃহকর বাড়ানোর প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার বিকেল চারটায় নগরের কোর্ট পয়েন্টে নাগরিক সমাবেশ ডাকা হয়েছে। গৃহকর বাড়ানোর প্রতিবাদে গঠিত ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’ কমিটির উদ্যোগে গতকাল বিকেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় নগরের ভাতালিয়া এলাকায় সিলেট মহানগর সচেতন নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন গৃহকর বাতিলের দাবিতে এক সভা হয়। কমিটির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব শহিদুল হোসেন আহমদ মামুনের সঞ্চালনায় এ সভা হয়েছে। এতে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার বক্স জাহাঙ্গীর, আখতার রসিদ চৌধুরী, আবদুল ফাত্তাহ বকশীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।