দুর্গাপুরে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যা মামলার বিচার নিয়ে শঙ্কা, আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ

নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত সাংমার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান স্বজন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা। রোববার দুপুরে দুর্গাপুরে বহেরাতলী এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা সুব্রত সাংমা (৪৭) হত্যার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। ইতিমধ্যে দুবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। রোববার দুপুরে দুর্গাপুরের বহেড়াতলী এলাকায় হাজংমাতা রাশিমনি চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

সুব্রত সাংমা কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।

পুলিশ ও সুব্রত সাংমার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববিরোধ ও সীমান্তে অবৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বহেড়াতলী রাশিমনি বাজারে কুল্লাগড়ার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবদুল আওয়াল ও তাঁর ভাই মো. শামীম মিয়ার নেতৃত্বে সুব্রত সাংমার ওপর হামলা করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের ৮ অক্টোবর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সুব্রত সাংমার বোন কেয়া সাংমা বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। বর্তমানে আসামিরা জামিনে আছেন।

মামলার বাদী কেয়া সাংমা বলেন, ‘মামলার পর দুবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন মামলাটি ডিবি পুলিশের এসআই সঞ্জয় সরকার তদন্ত করছেন। এক বছর চলে গেলেও আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। আসামিরাও জামিনে বেরিয়ে মামলা তুলে নিতে আমাদের অব্যাহত হুমকি দিচ্ছেন। মনে হচ্ছে ভাইকে যারা হত্যা করল, তাদের বিচার দেখে যেতে পারব না।’

এদিকে আজ দুপুরে বহেড়াতলী বাজার থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে বিজয়পুর সড়ক ঘুরে সুব্রত সাংমার বাড়িতে গিয়ে তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় রানীখং ধর্মপল্লির পাল পুরোহিত ফাদার ফিদালিউস নেংমিঞ্জা মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। পরে সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা বহেড়াতলী রাশিমনি চত্বরে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

সুব্রত সাংমার বড় ভাই বিজয় বার্নাড তজু সাংমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ভজন সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হাসান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গণি তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুল হান্নান, উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইমন তজু, বাগাছাসের সভাপতি সানি রাংসা, নিহতের বোন কেয়া সাংমা, নারী নেত্রী পিয়াসা রুগা, মালা রিছিল প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নির্বাচনী বিরোধ ও সীমান্তে অবৈধ ব্যবসায় বাধা দেওয়ায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা আবদুল আওয়ালের নেতৃত্বে নৃশংসভাবে সুব্রত সাংমাকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনের সময় আবদুল আওয়ালের লোকজন সুব্রত সাংমার ওপর হামলা করেছিলেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবদুল আওয়ালসহ সুব্রত সাংমা হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শাহনুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, সুব্রত সাংমা হত্যা মামলাটির তদন্তের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ২১ জন সাক্ষীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।