গণিত ও ইংরেজিভীতি দূর করছে কুমন: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী

ব্র্যাক কুমন এএসআইচআর (অ্যাডভান্স স্টুডেন্ট অনার রােল) পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন প্রদান করেন বাংলাদেশের নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। শনিবার দুপুরে সাভারের ব্র্যাক সিডিএমের হল রুমে
ছবি: প্রথম আলো

জাপানি কুমন শিক্ষা পদ্ধতির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি মনে করেন, শিক্ষার এই পদ্ধতি শিশুদের গণিত ও ইংরেজিভীতি কাটানোর পাশাপাশি প্রতিভা বিকাশে সহায়ক। তিনি বলেন, ‘প্রতিভা সবার মাঝে থাকে, কিন্তু সেই প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ–সুবিধা সবার থাকে না। আমাদের সময়কালে গণিত ও ইংরেজি বিষয়টা ভীষণ আতঙ্কের ছিল। আজ বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান গণিত ও ইংরেজি পড়তে ভালোবাসেন। আর সম্ভব হয়েছে জাপানি কুমন–এর মতো শিক্ষাপদ্ধতির কারণে।’

আজ শনিবার সাভারের ব্র্যাক সিডিএমের হলরুমে অনুষ্ঠিত ব্র্যাক কুমন এএসএইচআর (অ্যাডভান্স স্টুডেন্ট অনার রোল) পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জুনাইদ আহমেদ। তাঁর মতে, শিশু শিক্ষার্থীর জন্য সহজে গণিত ও ইংরেজি শিক্ষার জাপানি কুমন পদ্ধতি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চালু হলে বাংলাদেশের সর্বস্তরের শিশুদের শিক্ষার গুণগত মান অনেক সমৃদ্ধ হবে।

১৯৫৮ সালে জাপানি গণিত শিক্ষক তরু কুমন সহজে গণিত ও ভাষা শিক্ষার একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা ‘কুমন পদ্ধতি’ নামে পরিচিতি। প্রথমে জাপানে, পরে বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করেছে এই পদ্ধতি। বর্তমানে এ পদ্ধতিতে পৃথিবীর ৬০ দেশে ১৪ হাজার ৫০০ স্কুলে কুমন শিক্ষাপদ্ধতি চালু আছে।

২০১৭ সালে জাপানের কুমন ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে কুমন স্বশিক্ষাপদ্ধতি পরীক্ষামূলক চালু করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। এ পর্যন্ত আড়াই হাজার শিক্ষার্থীকে কুমন শিক্ষাপদ্ধতির আওতায় এনেছে সংস্থাটি। বর্তমানে সারা দেশে কুমনের পাঁচটি সেন্টারের কার্যক্রম চালু আছে। আগামী বছরের মধ্যে আরও ১২টি সেন্টার খোলার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাক কুমনের ৩৩০ জন শিক্ষার্থীকে সিলভার, ব্রোঞ্জ ও গোল্ড—এই তিন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ,  বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক কুমনের চেয়ারপারসন আসিফ সালেহ, ব্র্যাক কুমনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা সারওয়াত আবেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ব্র্যাক কুমন এএসআইচআর (অ্যাডভান্স স্টুডেন্ট অনার রােল) পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। শনিবার দুপুরে সাভারের ব্র্যাক সিডিএমের হল রুমে

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমাজের বিভিন্ন বিষয়ের অবক্ষয় রোধে ব্র্যাক কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অবদান প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতে গুণগত শিক্ষার উন্নয়নে কুমন হতে পারে একটা বড় দৃষ্টান্ত।

কুমন শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে দেশ ও সমাজের নেতৃত্ব দেবে বলে মনে করেন ব্র্যাক কুমন–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা সারওয়াত আবেদ। তিনি বলেন, কুমন শিক্ষার্থীরাই একদিন দেশকে নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য যেসব গুণাবলি প্রয়াজন, সেগুলো শিক্ষার্থীরা কুমন শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিখছে।

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের চিন্তাচেতনা তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, ফজলে হাসান আবেদ বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক মানুষের সে যেখানে যে অবস্থায় থাকুক না কেন, তার মধ্যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে সে সম্ভাবনা বাস্তবায়ন হয় না। এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সম্ভাবনা বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার শিক্ষা। আর শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে একটা সময় ব্র্যাক সারা দেশে ৬৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালিয়েছে। কুমন শিক্ষাপদ্ধতি দেশের সর্বস্তরে চালু হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবী পরিবর্তনের পথে নিজেদের যোগ্য হিসেবে তৈরি করতে পারবে।

বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের দীর্ঘ বন্ধুত্বের বিষয়টি তুলে ধরে দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘জাপান ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে। দীর্ঘমেয়াদি এই সম্পর্ক উদ্‌যাপনের জন্য নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানটি সেগুলোর মধ্যে সেরা একটি আয়োজন। শুধু ঢাকা মেট্রো রেল অবকাঠামো নয়, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে, এ দেশের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, এই দুটি ক্ষেত্র যেকোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’