তালতলীর জনসভায় বক্তব্য দেন মতিউর রহমান
তালতলীর জনসভায় বক্তব্য দেন মতিউর রহমান

নাশকতার মামলায় জামিন পাওয়া চেয়ারম্যান বললেন, ‘নেতার নেতৃত্বে ৭ তারিখের পরে প্রতিশোধ নেব’

নাশকতার চেষ্টা মামলায় জামিনে মুক্তির পর নৌকা মার্কার সভায় প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিলেন বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। গতকাল মঙ্গলবার তালতলীতে নৌকা মার্কার জনসভায় বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। মতিউর রহমান বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য।

মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি শম্ভুদার পক্ষ নিয়ে গৌরীচন্নার জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন আমার বাড়ির সামনে থেকে। জানি না, তাঁর কত বড় হাত। আমার নেতা (ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) আমাকে জামিন করিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। বলেছেন, তুমি ভয় পেয়ো না, নির্বাচন চালিয়ে যাও। কে কী পারেন, কে কী পারেন না জানা আছে। গোলাম সরোয়ার টুকু সাহেব, খলিল ভাই, ফোরকান ভাই, তাঁর সঙ্গে শম্ভুদার তুলনা নাই।’

মতিউর রহমান ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যখন একা ছিলাম চেয়ারম্যান হিসেবে, তখন আপনারা বড় বড় নেতা নিয়াও আমার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। আজকে যখন আমার মাথার ওপর একটি ছাদ (ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) দাঁড়িয়েছে, তখন আবার হুমকি দেওয়া শুরু করেছেন। আপনি তো জানেন না, এ হাত কত লম্বা, এ ছাদের হাত অনেক লম্বা। আমাকে তো দূরের কথা, কোনো সাধারণ মানুষকেও ভয় দেখালে ৭ তারিখের পরে আমি আমার নেতার নেতৃত্বে প্রতিশোধ নেব।’

গত ২৪ ডিসেম্বর সদর উপজেলার গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নৌকা প্রতীকের সভায় বক্তব্য দিয়ে ভোট চান এই ইউপি চেয়ারম্যান। পরের দিন সোমবার এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে নাশকতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগে করা পৃথক দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরের দিন বরগুনা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু নিজেই আদালতে জামিন আবেদন করেন। শম্ভুর জিম্মায় তিনি জামিন পান।

গত নভেম্বরে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহারের অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সদর থানায় দুটি মামলা করে। মতিউর রহমান ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাউকে হুমকি দিইনি, আমি বলেছি নির্বাচনের পর সন্ধ্যায় আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে, তাঁরা (ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান) আমাকে ৭ তারিখ সন্ধ্যায় দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আমি কোনো হুমকি দিইনি।’

এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তালতলীর মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না, তবে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকলে সেটা ঠিক করেননি। এমন বক্তব্যে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

বদরখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বদরখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন হুমকিতে আমরা শঙ্কিত। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে মনে করি। তবে তিনি নৌকার প্রার্থীর অনুসারী হলেও তিনি মূলত নির্বাচনবিরোধী।’
হুমকি দেওয়ার বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার (টুকু) প্রথম আলোকে বলেন, মতিউর রহমান নাশকতা মামলার আসামি, আশঙ্কা করছি নৌকার মঞ্চে থেকে তিনি যেকোনো ভোটকেন্দ্রে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটাতে পারেন।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরগুনা-১ (বরগুনা সদর-আমতলী–তালতলী) আসনে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম ছরোয়ার, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির ইউনুস সোহাগ, বিএনএমের  মো. মাসুদ কামাল, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের শাহ আলম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মাহবুবুর রহমান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম।