খেত থেকে বিক্রির জন্য ঝুড়ি বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে দেশি ক্ষীরা। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সৈয়দালিতে
খেত থেকে বিক্রির জন্য ঝুড়ি বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে দেশি ক্ষীরা। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের সৈয়দালিতে

মিরসরাইয়ের দেশি ক্ষীরা খেতে এত ভালো যে কারণে

পাহাড়ের কোলজুড়ে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। শীতের কুয়াশা মেখে মাঠজুড়ে কৃষকের হাঁকডাক চলছে। ভোর থেকে সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাত চালিয়ে কচি সতেজ ক্ষীরা তুলতে ব্যস্ত চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকার কৃষকেরা। শীত এলেই ক্ষীরাচাষিদের ব্যস্ততা বাড়ে মিরসরাইয়ের পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায়। স্বাদে–গন্ধে অতুলনীয় মিরসরাইয়ের ক্ষীরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের জেলায়ও।

পলিযুক্ত উর্বরতা শক্তির বালুমাটি আর পাহাড়ি ছড়ার মিঠাপানিতে চাষ হয় মিরসরাইয়ের দেশি ক্ষীরার। এ কারণে বাজারের অন্যান্য হাইব্রিড ক্ষীরার মতো তা পানসে বা তেতো নয় বলে জানান কৃষকেরা।

এ জাতের ক্ষীরায় কামড় বসালেও অপূর্ব স্বাদ ছড়িয়ে পড়ে মুখে। কচকচে, হালকা মিষ্টিভাব আর দারুণ গন্ধের কারণে অন্য যেকোনো ক্ষীরার চেয়ে এটি খেতে ভালো।

খৈয়াছড়ার সৈদালী গ্রামের কৃষক আবদুল হাসিম বলেন, ‘স্বল্প সময়ের ফসল ক্ষীরা চাষ লাভজনক। পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় পাহাড়ের কোলঘেঁষা বালুমাটিতে বংশপরম্পরায় ইউনিয়নের ৫০০ থেকে ৬০০ কৃষক ক্ষীরা চাষ করেন। এবার আমি দুই বিঘা জমিতে এ ফসলের আবাদ করেছি। কোনো রকম দুর্যোগ ছাড়া মৌসুম শেষ করতে পারলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ থাকবে আমার। খেতে বীজ বপন থেকে শুরু করে ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন উঠে যাওয়ায় এ জমিতে আবার নতুন ফসল আবাদ করা যায়। তবে বাজারে ভালো মানের টিএসপি সারের সংকট আমাদের ভোগাচ্ছে।’

মিরসরাইয়ের মাঠজুড়ে ক্ষীরা খেত। সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ক্ষীরা। গতকাল সকালে তোলা

গত বুধবার ভোরে সরেজমিন খৈয়াছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে তোলা ক্ষীরা ঝুড়িতে ভরে কেউ মাথায় করে, কেউবা ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রি করতে। পূর্ব খৈয়াছড়ার রেলগেট এলাকায় বসে ক্ষীরা বিক্রির মৌসুমি পাইকারি বাজার। ক্ষীরা কিনতে সকাল থেকে এখানে এসে ভিড় করতে দেখা যায় দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের। সকাল ৮টার মধ্যে গাড়ি বোঝাই করে এখান থেকে ক্ষীরা নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। পাইকারিতে প্রতি কেজি ক্ষীরা বিক্রি হতে দেখা যায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

ক্ষীরা কিনতে পূর্ব খৈয়াছড়া রেলগেট এলাকায় এসেছেন ব্যবসায়ী নুরুল আফছার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খৈয়াছড়া এলাকার ক্ষীরা খেতে কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা বেশি। প্রতি সকালে এখানে চট্টগ্রাম শহর, সীতাকুণ্ড, ফেনী ও নোয়াখালী জেলার পাইকারেরা ক্ষীরা কিনতে আসেন। আমি মৌসুমজুড়েই খৈয়াছড়ার ক্ষীরা নিয়ে ফেনীতে বিক্রি করি। ভরা মৌসুমে এখান থেকে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ টন ক্ষীরা যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়।’

খৈয়াছড়া এলাকায় ক্ষীরা চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ক্ষীরা চাষের ঐতিহ্য বেশ পুরোনো। এই এলাকায় ‘নওগাঁ গ্রিন’ ও ‘হাতিয়া কিং’ নামের দুটি জাতের ক্ষীরার আবাদ বেশি হয়। পাহাড়ি ছড়ার মিঠাপানি আর সুক্রোজের (প্রাকৃতিক শর্করা) পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকায় এ জাতের ক্ষীরা একটু মিষ্টি হয়। স্বাদের কারণে এখানকার ক্ষীরা এখন মিরসরাইয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলা–উপজেলাতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।