চুরির শিকার সোনামণি ঘোষের ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। আলমারির তালা ভাঙা। ১০ অক্টোবর রাতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকায় এই চুরির ঘটনা ঘটে
চুরির শিকার সোনামণি ঘোষের ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড। আলমারির তালা ভাঙা। ১০ অক্টোবর রাতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ছোট কালিয়া এলাকায় এই চুরির ঘটনা ঘটে

নড়াইলের কালিয়ায় একের পর এক চুরির ঘটনায় আতঙ্ক

নড়াইলের কালিয়া উপজেলা সদরে একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে। গত দেড় মাসে অন্তত ১১টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ ও মামলা হলেও চোরেরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। লাগাতার চুরির ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

সর্বশেষ গত বুধবার রাতে কালিয়া পৌরসভার শিশু বিদ্যানিকেতনের তালা ভেঙে শ্রেণিকক্ষের চারটি ফ্যান ও জানালার গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার কালিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক শ্যামল রায়। এর আগে ১০ অক্টোবর বড় কালিয়া এলাকায় সোনামণি ঘোষের বাড়ির জানালার গ্রিল কেটে প্রায় ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, চারটি মুঠোফোন এবং নগদ ৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরেরা। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর কালিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন সোনামণি ঘোষ। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

সোনামণি ঘোষের মেয়ে তনিমা ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু আমাদের নয়, বাড়ির পাশের অনেকগুলো বাড়িতে চুরি হয়েছে। সব কটি বাড়ি প্রধান সড়কের পাশে। সব কটি চুরির ঘটনা ঘটেছে একইভাবে, জানালা ভেঙে।’

এর আগে গত ২৬ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো একসময় উপজেলার শালবরাত গ্রামে মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কেয়া দাসের ঘরের জানালার গ্রিল কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায় চোরেরা। ক্ষতিগ্রস্ত কেয়া দাস প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছুটিতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ২৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফিরে দেখেন, জানালার গ্রিল কেটে শোকেসে থাকা ২ ভরি ওজনের দুটি সোনার চেইন, তিন জোড়া সোনার কানের দুল, দুটি সোনার আংটি ও রুপার তিন জোড়া নূপুর, মুঠোফোন এবং নগদ ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ঘরে থাকা তাঁর স্বামীর পাসপোর্টও নিয়ে গেছে চোরেরা।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রামনগর এলাকার লিটু শেখ, ১৭ সেপ্টেম্বর মিলন কাজীর বাড়িতে চুরি হয়। এ ছাড়া রামনগরের সুশান্ত দাস, বৈদ্যপটি এলাকার সুব্রত দাসসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চুরির খবর পাওয়া গেছে। প্রায় সব কটি ঘটনায় সড়কের পাশে ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা বাড়িতে হানা দিয়েছে চোরের দল। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা চিহ্নিত ও ধরা না পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে সাধারণ মানুষের। কখন কোথায় চুরি হয়, সেই ভয়ে রয়েছেন তাঁরা।

চোর ধরতে ও চুরি ঠেকাতে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে কালিয়া থানার নবাগত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরির ঘটনা বেড়েছে। আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছি। দুই দিন আগে এক চোরকে ধরে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চোরদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। আশা করছি, বাকি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুব দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারব।’ কালিয়া বাজার ও যেসব এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেসব জায়াগায় রাতে পাহারা বসানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে পুলিশের কথায় এখনো আশ্বস্ত হতে পারছে না মানুষ। ভুক্তভোগী কেয়া দাস বলেন, ‘চুরির ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে, কিন্তু এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। একই ঘটনা বারবার ঘটছে কিন্তু কোনো প্রতিকারই হচ্ছে না। আমার মনে হয়, একটি চক্রই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।’

ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন জানিয়ে কেয়া দাস বলেন, ‘আমার বাসাটা একদম বাজারের ওপর। বাড়িতে আমি, আমার স্বামী ও মেয়ে থাকি। যেভাবে জানালার গ্রিল কেটে চুরি করেছে, তাতে এখন স্বামী বাড়িতে না থাকলে মেয়েকে নিয়ে থাকতে ভয় লাগছে। চেষ্টা করছি আরেকটু নিরাপদ বাসায় যাওয়ার।’

লাগাতার চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগী মিলন কাজীও। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়িতে বউ-বাচ্চাকে একা রাখতেও ভয় লাগছে। দ্রুত এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’