বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল এলাকার ‘সাগর বাহিনীর’ প্রধান সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপনকে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া এলাকায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সাগর তালুকদার সাবরুল বাজার এলাকার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী। তাঁর সহযোগী স্বপন সাবরুল তালুকদার পাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে।
এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাবরুল বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়া শহরে যাওয়ার পথে মাথাইলচাপড় এলাকায় কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহজালাল তালুকদার ওরফে পারভেজকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। কারাগারে থেকে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগে সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। ২টি হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ সাগর অন্তত ১২টি মামলার আসামি ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের সাবরুল ছোট মন্ডলপাড়া এলাকায় বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন সাগর। এ সময় মোটরসাইকেলে আসা একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে সাগর ও তাঁর দুই সহযোগীকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে। এতে ঘটনাস্থলেই সাগর ও স্বপন নিহত হন। আহত আরেক সহযোগীকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
খবর পেয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার জিদান আল মুসা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদসহ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগর ও তাঁর এক সহযোগী প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছেন। তবে হামলাকারীদের এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সাগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ এক ডজন মামলা আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার ছত্রচ্ছায়ায় শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলার আশপাশে ৩০ গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন সাগর তালুকদার। সাবরুল বাজারে সাগরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মামা-ভাগনে এন্টারপ্রাইজ কার্যত সন্ত্রাসীদের আখড়া। এক দশক ধরে ওই দোকানে বসে নানা অপকর্মে জড়িয়েছেন তিনি। বাড়ি নির্মাণ, জমি কেনা থেকে ব্যবসা সবকিছুতেই চাঁদা দিতে হতো সাগরকে। তাঁর অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি বাহিনী আছে। মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে চলাফেরা করতেন সাগর। সড়কে মাছের গাড়ি, যানবাহন থেকে শুরু করে জমি চাষের পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর থেকেও চাঁদাবাজি করেন তাঁরা।