সিলেটে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২২৮ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নিচ্ছেন বিক্রেতারা। ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডার তাঁরা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা। সম্প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর ৭৬ টাকা কমিয়েছে সরকার। কিন্তু আগের দামের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি কিনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
আজ শনিবার সকালে সিলেটের বিভিন্ন এলাকার গ্যাস বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। মার্চে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। ঘোষিত নতুন দর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম গত মাসে একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকার দাম কমালেও বিক্রেতারা সেটি মানছেন না। তাঁরা পূর্ব নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন। আবার কিছু কিছু বিক্রেতা দাম কমানোর নোটিশ জারির পর থেকে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের বন্দরবাজার এলাকার এক সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তবে চুলার সঙ্গে সিলিন্ডার বিক্রি করছেন। কারণ জানতে চাইলে বললেন, সিলিন্ডার গ্যাস বেশি দামে কেনা। এখন সেই দাম ক্রেতাদের কাছে চাইলে বাগ্বিতণ্ডায় জড়াতে হচ্ছে। এ জন্য সিলিন্ডার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, বাজারে বেশি দাম দিয়েও সিলিন্ডার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও ব্যবস্থাপনা করে না। এতে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।
বন্দরবাজারের মাখন মিয়া চুলা ঘরের ব্যবসায়ী মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করলেও ডিলাররা ডলারের দাম বাড়ার কথা বলেন। তাঁদের কাছ থেকে বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে হয়। ফলে ভোক্তাদের ওপর এর প্রভাব পড়ে। খুচরা বিক্রেতাদের হাতে কিছুই থাকে না। তিনি বলেন, সরকার সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকি করলে ভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারিত দামে সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব হতো।
নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬০০ টাকা এবং প্লাস্টিকের তৈরি সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি করছেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া হোম সার্ভিস চালু রেখেছেন। এ জন্য অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা রাখেন।
নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শুভাশিষ দেব প্রথম আলোকে বলেন, ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে চারজনের একটি পরিবার এক মাস চলে। ফেব্রুয়ারি মাসেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সিলিন্ডার কিনেছিলেন। তখন ১ হাজার ৬৫০ টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস কিনেছিলেন। মার্চে দাম কমালেও একই দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। বড় দোকানের তুলনায় মহল্লার ছোট দোকানে দামের পার্থক্য বেশি। বিষয়গুলো তদারকির কেউ নেই। এ জন্য যে যার ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে।
শনিবার সকালে বন্দরবাজার এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে গিয়েছিলেন নগরের মাছুদিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা মারজান আহমদ। তিনি বলেন, সাতজনের পরিবারে দুটি সিলিন্ডার দিয়ে দেড় মাস চলে। সিলিন্ডারের দাম দিন দিন বাড়ছে। দাম বাড়ার তুলনায় কমার হার কম। সরকারিভাবে দাম কমানো হলেও বিক্রেতারা সেটি মানেন না। তাঁরা বিভিন্ন অজুহাতে সিলিন্ডারের দাম বাড়ান। ক্রেতাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। এ জন্য বিক্রেতারা কোনো রসিদও দেন না। ফলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।