বিপন্ন ভাষা হিসেবে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে পাহাড়িয়া ভাষা। পাহাড়িয়া জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার প্রমিত রূপকে মালত ভাষাও বলা হয়। আজ শনিবার রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে পাহাড়িয়া ভাষার কি-বোর্ডের উদ্বোধন করা হয়।
সকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি ও পাহাড়িয়া পরিষদের যৌথ আয়োজনে ‘পাহাড়িয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা চর্চার প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। সভা শেষে তিনি পাহাড়িয়া ভাষার কি-বোর্ডের উদ্বোধন করেন।
দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক তৈরি করতে ভাষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একমাত্র ভাষার কারণেই মানুষ অন্যান্য জীবের থেকে বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই ভাষা টেকনোলজি ও প্রকৃতির সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে যে জাতি যত বেশি ভাষা জানবে, সেই জাতি তত বেশি তথ্য ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে। আজ থেকে পাহাড়িয়া ভাষাটি দক্ষিণ এশিয়ার নবীনতম ভাষা হিসেবে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করল। এর মধ্য দিয়ে পাহাড়িয়া মাতৃভাষার কি-বোর্ডটি বিশ্বে ২৯৫তম কি-বোর্ড হিসেবে স্বীকৃতি পেল। বিশ্বে ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে পাহাড়িয়া ভাষার সঙ্গে পরিচিত করতে এই কি-বোর্ড সহযোগিতা করবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আদিবাসী ভাষাপ্রযুক্তিবিদ সমর এম সরেনকে পাহাড়িয়া ভাষার প্রযুক্তি নির্মাণসহ দেশের বিভিন্ন আদিবাসী ভাষার প্রযুক্তি নির্মাণে অবদান রাখার জন্য রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে ইউনেসকোর ইন্টারন্যাশনাল ডেকেট অব ইনডিজিনাস ল্যাংগুয়েজেসে (আইডিআইএল) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর নেতৃত্বেই রাজশাহীসহ সমতল অঞ্চলের আদিবাসী তরুণদের প্রচেষ্টায় ‘ল্যাংগুয়েজ রিসোর্স হাব’ নামে আদিবাসী ভাষাপ্রযুক্তি সংগঠনের মাধ্যমে সম্প্রতি গুগল অনুবাদে সান্তালি ভাষা সম্পৃক্ত হয়েছে।
সমর এম সরেন বলেন, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে পাহাড়িয়া ভাষাগুলোর মতো বিপন্ন ভাষা প্রযুক্তিমাধ্যমে টিকিয়ে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নিজেদের ভাষাপ্রযুক্তি না থাকায় ভাষাগুলো আরও বিপন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এ জন্য এই ভাষাগুলো ডিজিটাল মাধ্যমে, কি-বোর্ড, স্পেল চেকারের মতো ডেটা প্রোডাকশন টুলে প্রবেশ করানো খুবই জরুরি।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির উপপরিচালক বেনজামিন টুডু। একাডেমির ইনস্ট্রাক্টর মানুয়েল সরেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে একাডেমির পক্ষ থেকে পাহাড়িয়া ভাষার কি–বোর্ডের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন একাডেমির নির্বাহী সদস্য ও সাংবাদিক আকবারুল হাসান (মিল্লাত)। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন একাডেমির নির্বাহী সদস্য শেলী প্রিসিল্লা বিশ্বাস, আদিবাসী ভাষাপ্রযুক্তিবিদ সমর এম সরেন, গোদাগাড়ীর নবাই বটতলা ধর্মপল্লির সহকারী পাল-পুরোহিত ফাদার আরতুরো স্পেজিয়ালে পিমে, পাহাড়িয়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক অভিলাষ বিশ্বাস ও আদিবাসী ভাষাবিশেষজ্ঞ মৃদুল সাংমা।
উল্লেখ্য, ফ্রেন্ডস অব এনডেঞ্জার্ড এথনিক ল্যাংগুয়েজেসের (ফিল) তত্ত্বাবধানে ও পাহাড়িয়া ভাষা–গবেষক অভিলাষ বিশ্বাসের নেতৃত্বে পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় এক বছরের প্রচেষ্টায় কম্পিউটার কি-বোর্ড তৈরি করতে সক্ষম হয় গবেষক দল। দ্রুত মোবাইল কি-বোর্ডে ব্যবহারের উপযোগী অ্যাপ তৈরি করা হবে বলে জানিয়েছে গবেষক দল। ফিলের আদিবাসী ভাষাবিদ মৃদুল সাংমা জানান, পাহাড়িয়া ভাষার স্পেল চেকার, ৫ হাজার শব্দের অনলাইন পাহাড়িয়া অভিধান তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।