গাজীপুরের শ্রীপুরে নাশকতা মামলার এক আসামি দাবি করেছেন, তিনি ছাত্রলীগ করেন এবং তাঁর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গত রোববার শ্রীপুর থানায় ২৭ জনকে আসামি করে নাশকতার মামলাটি করেন স্বপন আহমেদ নামের এক বাসমালিক।
ওই মামলার ১৩ নম্বর আসামি আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩), যিনি নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করেছেন। আল মামুন উপজেলার বরমী ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফার ছেলে। নাশকতার মামলায় নিজের নাম দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে আল মামুন লিখেছেন, ‘আমি একজন ছাত্রলীগ কর্মী। আমরা কি সারা জীবন এভাবেই নির্যাতিত হব। আমি কি আওয়ামী লীগ করে কোনো দোষ করেছি।’
একই স্ট্যাটাসে বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দাপ্তরিক প্যাডে লেখা একটি প্রত্যয়নপত্র প্রকাশ করেছেন আল মামুন। ওই প্রত্যয়নপত্রে তাঁকে আওয়ামী পরিবারের লোক হিসেবে প্রত্যয়ন করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী আমজাদ পণ্ডিত ও সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ খন্দকার। গত বছরের ১৫ জুলাই তারিখের প্রত্যয়নপত্রে লেখা আছে, ‘আবদুল্লাহ আল মামুন সৎ, শান্ত, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। তাঁর বাবাসহ পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত।’
প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষরকারী বরমী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছেলে (আবদুল্লাহ আল মামুন) ছাত্রলীগ করে কি না, জানি না। তাঁর চাকরির জন্য প্রত্যয়নপত্র দরকার হয়েছিল। এলাকার ছেলে হিসেবে তাঁকে প্রত্যয়ন করেছিলাম। তাঁকে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের কোনো মিছিল মিটিংয়ে কখনো দেখেছি বলে মনে হয় না।’
তবে আল মামুন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত বলে জানান বরমী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মুরাদ হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আবদুল্লাহ আল মামুন ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে জানি। কীভাবে মামুন মামলার আসামি হলেন, তা বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ আল মামুন মনে করছেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁকে মামলায় জড়িয়েছে। তিনি ও তাঁর পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি করেন। মামুন দাবি করেন, বরমী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ হায়দারের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার দুপুরেও শান্তি সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে শরীফ হায়দারের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা বিএনপির ডাকা হরতালের সমর্থনে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বেড়াইদেরচালা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় স্বপন আহমেদের মালিকানাধীন তাকওয়া পরিবহনের একটি মিনিবাস ভাঙচুর করেন আসামিরা। তবে এ বিষয়ে স্বপন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলাটির তদন্ত চলছে জানিয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে দলীয় পরিচয় বিবেচনা করা হবে না। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।