ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। শনিবার দুপুরে শহরের শহীদ ওমর ফারুক সড়কে
ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ। শনিবার দুপুরে শহরের শহীদ ওমর ফারুক সড়কে

পিরোজপুরে সংসদ সদস্যের অনুসারীকে কোপানোর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, পাল্টাপাল্টি মিছিল

পিরোজপুরে সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী ফয়সাল আকনকে (৩৫) কুপিয়ে জখমের ঘটনায় দুই দিনেও মামলা হয়নি। এ ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি পক্ষ পিরোজপুর জেলা শহরে পাল্টাপাল্টি মিছিল সমাবেশ করেছে।

গত শুক্রবার রাতে পিরোজপুর পৌরসভার উত্তর নামাজপুর মহল্লায় ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে। ফয়সাল উত্তর নামাজপুর মহল্লায় মোজাম্মেল আকনের ছেলে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গতকাল শনিবার তিন দফা তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

আহত ফয়সাল আকনের স্বজন মো. বাদল বলেন, ফয়সালের মাথা, পেট ও হাতে তিন দফা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন।

আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে। শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের লোকজনকে দায়ী করছেন শ ম রেজাউল করিমের লোকজন। তবে আউয়ালের অনুসারীদের দাবি, ফয়সাল আওয়ামী লীগের কেউ নন। তাঁর ওপর হামলার ঘটনা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। স্থানীয় বিরোধের জেরে একই মহল্লার কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে কুপিয়েছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য এ কে এম এ আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে আউয়ালের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ফয়সাল আকন ও তাঁর পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগ করেন না। উত্তর নামাজপুর মহল্লায় তাঁর বাড়ির সামনে একই গ্রামের কয়েকজন তাঁকে কুপিয়ে জখম করেছেন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তাঁর ভাইদের জড়িয়ে কটূক্তি করছেন সংসদ সদস্যের লোকজন। তাই তাঁরা কটূক্তির প্রতিবাদে পাল্টা মিছিল করেছেন।

পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তাঁর ভাইদের নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে শহরে মিছিল করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। শনিবার বিকেলে পিরোজপুর শহরের শহীদ ওমর ফারুক সড়কে

শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ফয়সাল আকন সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন। নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য আমার প্রতিপক্ষের লোকজন ফয়সালের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ওই পক্ষটি সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।’

এদিকে ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে জখমের প্রতিবাদে শুক্রবার রাতে ও শনিবার দুপুরে শহরে মিছিল সমাবেশ করেছে শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শনিবার দুপুর ও বিকেলে পাল্টা মিছিল করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের অনুসারী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল শনিবার দুপুরে দুই পক্ষ শহরে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিরোজপুর পৌর বাজারের চারজন ব্যবসায়ী বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনের ঘটনা ঘটেছে। দুটি পক্ষ যেভাবে মারমুখী অবস্থানে শহরে মহড়া দিয়েছে। এতে তাঁরা শঙ্কিত।

ফয়সালের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উত্তর নামাজপুর মহল্লার কাইয়ুম আকনের দোকানে ফয়সাল আকন বসেছিলেন। এ সময় একই গ্রামের মিজানুর রহমান ও সাঈদুর ফকিরের নেতৃত্বে দুটি মোটরসাইকেলে কয়েকজন সন্ত্রাসী সেখানে যায়। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফয়সাল আকনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরপর মৃত ভেবে ফেলে রেখে সন্ত্রাসীরা চলে যায়।

প্রসঙ্গত, পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই নেতার অনুসারীরা বিভক্ত। ফলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই দুই পক্ষের মধ্যে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।