নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র থেকে বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলের নামে সংগ্রহ করা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া না পর্যন্ত বাতিলের এখতিয়ার কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন ওই আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য। গত রোববার জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানানো হয়, নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কায়সারের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে গতকাল সোমবার গিয়াস উদ্দিন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লোক মারফত একটি লিখিত আবেদনে জানান, তিনি ওই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। এটি বাতিলের দাবি জানান। বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেন এই বিএনপি নেতা।
গিয়াস উদ্দিন একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ছাড়ার সময় গিয়াস উদ্দিন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ছিলেন। ওই নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন শামীম ওসমানকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জে নানা কারণে এই দুই নেতা আলোচিত ও সমালোচিত।
এবারও আসনটিতে নৌকার টিকিট পাওয়া শামীম ওসমানের দাবি, ২০০১ সালের নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন ফলাফল বদলে জয়ী হয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন এখন দল বদলানোর চেষ্টা করছেন। এর আগেও তিনি অনেক বদল করেছেন। কিন্তু এবার কেউ তাঁকে দলে নিতে চাইছেন না। তিনি কেন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বা নেননি, জমা দেবেন কি না—এটা আমার বিষয় না। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া না পর্যন্ত তা বাতিলের এখতিয়ার নেই, প্রশ্নই ওঠে না। এখানে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি করা হচ্ছে।’
গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে কি না, এ প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিল না করা পর্যন্ত সেটি আগে থেকে বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। আর মনোনয়নপত্র নির্দিষ্ট তারিখে (৩০ ডিসেম্বর বিকেল চারটা) জমা না দিলে, সেটি অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান দাবি করেন, গত ১৪ বছরে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সহিংসতা ছিল না। সবাই সহাবস্থানে থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন বিএনপির সভাপতি হওয়ার পর বাস পোড়ানো হচ্ছে ও ককটেল মারা হচ্ছে। বিএনপির সমর্থকদের হুমকি দিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত যা করছেন, আর কইরেন না। আমি যদি বলি নারায়ণগঞ্জে ধর বিএনপি; তাহলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওদের বাড়িঘরে হামলা হবে, তখন দোষ পড়বে আমার ওপর। কিন্তু আমি এটা চাই না।’
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে কিছু হবে না দাবি করেন শামীম ওসমান। তিনি বলেন, দেশে সঠিক সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আবার মধুর হবে।
দলীয় মনোনয়ন না পেলেও অনেক আসনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার আসনে বিদ্রোহী কেউ প্রার্থী হতে আসবে না। আর কেউ যদি হয়, আমি তাকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলব না, সে স্পোর্টসম্যান। সেখানে খেলব। আমরা স্লোগান দেব—খেলা হবে।’
সামনের ১৫-২০ দিনে নারায়ণগঞ্জসহ সব জায়গায় বড় ধরনের সহিংসতা হতে পারে বলে মনে করেন শামীম ওসমান। তাঁর আশঙ্কা, নির্বাচনে প্রচারণা চালানোর সময় তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হতে পারে। কারা তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন, সেটাও জানেন উল্লেখ করে তিনবারের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘তবে অনুরোধ বোমা হামলা কইরেন না। আমাকে একা সিঙ্গেল টার্গেট করে মাইরেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত, মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা প্রমুখ।