টানা দুই দিন রোদ থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার চারটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি নদী ভোগাই ও চেল্লাখালীতেও পানি অনেকটাই কমে গেছে। তবে পানি ধীরগতিতে কমায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত তিন ইউনিয়নের ২৩টি গ্রামের প্রায় ছয় হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বন্যা–পরবর্তী সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে অনেক বাসিন্দার।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ১৯৮ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত শনিবার রাত থেকে উপজেলায় উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে কলসপাড়, যোগানিয়া, মরিচপুরান ও রাজনগর ইউনিয়নের ৭১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। গত দুই দিন আকাশে রোদ থাকায় গতকাল পর্যন্ত নিম্নাঞ্চলের প্লাবিত গ্রামগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। ধীরগতিতে কমার কারণে যোগানিয়ার ১০টি গ্রামে ৪ হাজার, কলসপাড় ইউনিয়নের ৮টি গ্রামে ১ হাজার ও মরিচপুরান ইউনিয়নে ৫টি গ্রামে ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী। এসব এলাকার বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি জমে থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ছাড়া চলাচল করতে পারছেন না অনেক এলাকার বাসিন্দারা।
বন্যার এমন পরিস্থিতি অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। তাঁদের একজন পশ্চিম কাপাসিয়ার মাটিফাটা গ্রামের গৃহিণী হোসনা বেগম। তিনি বলেন, ‘বাড়িঘরে বন্যার পানি ওঠায় ছয় দিন ধইরা স্বামী-সন্তান লইয়া আশ্রয় নিছি। ত্রাণ হিসেবে যা পাই, তাই খাইয়া কোনো রহম দিন কাডাইতাছি। বন্যার পানিতে আমগর ঘরদোর সব ভাইঙ্গা গেছে। পানি কমলেও কই উঠমু, বাড়ি ঘর ঠিক করতে কই টেহা পামু? এই নিয়া আমরা চিন্তায় আছি।’
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, পানিবন্দী মানুষের কাছে নৌকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৭৬০টি পরিবারকে শুকনা খাবার, স্যালাইন, মোমবাতি ও রান্না করা খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।