নতুন ঘরের চাবি পেল সাফজয়ী রুপনার পরিবার, তবে এখনই উঠছে না

ঘরের চাবি বুঝে পেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমা। আজ শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ভূঁইয়ো আদাম গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নারী সাফজয়ী সেরা গোলরক্ষক রুপনা চাকমার পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া নতুন ঘর নির্মাণ শেষে চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমার হাতে চাবিটি তুলে দেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তবে ওই ঘরে এখনই উঠছেন না রুপনার পরিবার। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর বসবাস শুরু করতে চান তাঁরা।

জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে ভূঁইয়ো আদাম গ্রামে রুপনা চাকমাদের বাড়ি। ঢালু পাহাড় বেয়ে সেখানে যেতে হয়। আজ শুক্রবার দুপুরে রুপনা চাকমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কালাসোনা চাকমা নতুন ঘরটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।

নতুন ঘরের চাবি পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন কালাসোনা চাকমা। বাড়ির কক্ষগুলো ঘুরে দেখাতে দেখাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিসি সাহেব আমাদের নতুন ঘরের চাবি দিয়েছেন। ঘরটি পেয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা সবাই খুশি। আমাদের বাড়িটি নাকি প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তিনি উদ্বোধন করার পর নতুন ঘরে উঠব। এ ছাড়া আমরা ঘরে ওঠার আগে ভিক্ষু ডেকে পূজা–অর্চনার পর পরিশুদ্ধ হয়ে উঠব।’

সাফজয়ী রুপনা চাকমার পরিবারের জন্য ৯২৫ বর্গফুট জায়গায় ওপর নির্মিত ঘরটি নির্মাণের ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা

বাড়িতে যাতায়াতের রাস্তার প্রসঙ্গ তুলে কালাসোনা চাকমা বলেন, রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম থেকে আসতে একটি ছড়া পার হতে হয়। এ ছাড়া রাস্তাটিও ঝুঁকিপূর্ণ। ছড়ায় একটি সেতু ও একটি রাস্তা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ, আগে এখানে কোনো মানুষ আসতেন না। রুপনার কারণে এখন অনেক মানুষের যাতায়াত। সে জন্য রাস্তাটি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

এর আগে গতকাল বিকেলে ভূঁইয়ো আদাম গ্রামে রুপনা চাকমাদের বাড়িতে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সেখানে তিনি রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমার হাতে ঘরের চাবিটি তুলে দেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস এম ফেরদৌস ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি বরুণ দেওয়ান, নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া, নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজন হালদার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রিপন দাশ, জেলা স্কাউট নেতা মো. নুরুল আবছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাফের সেরা গোলরক্ষক রুপনা চাকমার আগের বাড়ি

ভূঁইয়ো আদাম এলাকায় জরাজীর্ণ বাড়িতে বসবাস করতেন রুপনা চাকমারা। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গণমাধ্যমে সেই ঘর নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই ছবি দেখে গত সেপ্টেম্বরে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রাঙামাটি জেলা ও নানিয়ারচর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় টিনের ছাউনি পাকা ঘরের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। ৩০ শতক জমিতে তিনটি শয়নকক্ষ, একটি বসার ঘর, ডাইনিং স্পেস, একটি রান্নাঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ৯২৫ বর্গফুট জায়গায় ওপর নির্মিত ঘরটি নির্মাণের ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
ভূঁইয়ো আদাম গ্রামের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুবিলাস চাকমা বলেন, রুপনাদের বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ করে চাবি দেওয়া হয়েছে। এখন উদ্বোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বসবাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক রুপনা চাকমার বাড়িটি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রুপনা চাকমার মা কালাসোনা চাকমার হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী ঘরটি উদ্বোধন করবেন।