তিন সহপাঠীকে ব্লেড দিয়ে জখম করার অভিযোগ এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে

বাগেরহাটের ফকিরহাটে ব্লেড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে সহপাঠীসহ তিন শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে অপর এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নাসির সরদারের (১৮) বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার রাতে ফকিরহাট মডেল থানায় মামলা করেছেন আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা। ঘটনার সময় তাঁকে পুলিশে দেওয়া হয়।

আহত শিক্ষার্থীদের অন্তত ১০ সহপাঠীর সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তাঁদের ভাষ্য, পরীক্ষার হলে নকলের কথা শিক্ষকদের বলে দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত ও আহত শিক্ষার্থীরা ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর সাকিনা-আজাহার টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র। গতকাল সোমবার দুপুরে কলেজের পরীক্ষা শেষে ফেরার পথে উপজেলার শান্তিগঞ্জের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

আহত তিনজন হলেন কলেজের একাদশ শ্রেণির বিএম ট্রেডের ছাত্র জাকারিয়া হাওলাদার (১৭), জয়ন্ত রাহা (১৭) ও একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্র মুসা আবদুল্লাহ (১৬)। তাঁদের মধ্যে জাকারিয়া ও জয়ন্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। মুসাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।

আহত জাকারিয়া হাওলাদারের সঙ্গে খুলনা মেডিকেলে থাকা তাঁর বাবা দুলাল হাওলাদার মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, এখন তাঁর ছেলে এবং অপর শিক্ষার্থীর অবস্থা স্থীতিশীল বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।

ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ এস এম মফিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনের মধ্যে জাকারিয়ার মাথা, বুক ও পেটে এবং জয়ন্তের মুখের বাঁ পাশে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। আর মুসা আবদুল্লাহর পিঠে আঘাত রয়েছে। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। আহত জাকারিয়া ও জয়ন্তকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

সহপাঠীরা বলছেন, ওই দিন তাঁদের কলেজে পরীক্ষা চলছিল। তখন নকলের দায়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁদের একজন নাসির কলেজের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই শিক্ষার্থীর কাছে নকল থাকার কথা শিক্ষককে বলে দেওয়ায় সে ক্ষুব্ধ হয়। বহিষ্কারের ক্ষোভ থেকে সে এ ঘটনা ঘটায়।

তবে আহত শিক্ষার্থী জয়ন্ত রাহার বাবা সুভাস কান্তি রাহা বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন, তাতে পূর্বশত্রুতার জেরে হামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সাকিনা–আজহার টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল পরীক্ষা শেষে কলেজের অদূরে শান্তিগঞ্জের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমরা শিক্ষকেরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে যাই। তখন আহত ও হামলাকারী শিক্ষার্থী সেখানে ছিল। পরে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশে দেওয়া হয়।’

হামলার কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শেখ মিজানুর রহমান বলেন, ওই দিন নকল করার জন্য দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁরা পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই চলে যান। আর শিক্ষকেরাই নকল ধরেছেন। এখানে অন্য শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা নিয়ে হামলা হয়নি বলেই মনে হয়। তবে কেন হামলা হয়েছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে দেখছে।

ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আলীমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আটক শিক্ষার্থীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফকিরহাট মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে হামলার কারণ জানা যাবে।