সেন্ট মার্টিনের একটি পর্যটকবাহী নৌযান। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর এখন টেকনাফ–সেন্টমার্টিন রুটে বন্ধ নৌচলাচল
সেন্ট মার্টিনের একটি পর্যটকবাহী নৌযান। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনার পর এখন টেকনাফ–সেন্টমার্টিন রুটে বন্ধ নৌচলাচল

টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথ

মিয়ানমার থেকে এবার স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ

একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় টানা ছয় দিন ধরে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলারসহ নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার আবারও একটি স্পিডবোট লক্ষ্য করে ১০ থেকে ১২টি  গুলি করা হয়েছে। তবে স্পিডবোটে থাকা পাঁচজন যাত্রী প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম এলাকার গোলগরা নামক স্থানে স্পিডবোটটি পৌঁছালে মিয়ানমার থেকে আসা একটি ট্রলার থেকে গুলি করা হয়। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম।

স্থানীয় নৌযানচালক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনাটির নাম বদরমোকাম। এর আধা কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্ট। আর সেই নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে মিয়ানমারের অজ্ঞাত একটি অস্ত্রধারী গোষ্ঠী। যে গোষ্ঠীটি কোনোভাবেই টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার বা স্পিডবোট চলাচল করতে দিচ্ছে না। ট্রলার বা স্পিডবোট দেখার সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করছে।

এ নৌপথে টানা ছয় দিন নৌযান বন্ধ থাকার পর আজ পাঁচজন যাত্রী নিয়ে একটি স্পিডবোট সেন্ট মার্টিনের দিকে রওনা হয়। ওই স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি করে গোষ্ঠীটি। এতে কেউ হতাহত না হলেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপজুড়ে এখন চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেন্ট মার্টিনে খাদ্যসংকট তৈরি হচ্ছে।

ইউপি সদস্য ও স্পিডবোটের মালিক খোরশেদ আলম জানান, চিকিৎসার জন্য জরুরি টেকনাফে আসা পাঁচজন যাত্রীর সেন্ট মার্টিন ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে স্পিডবোটের চালক মোহাম্মদ বেলাল সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালীয়া ঘাট থেকে যাত্রা করেন। স্পিডবোটটি শাহপরীর দ্বীপ অতিক্রম করে নাফ নদীর বদরমোকামের ‘গোলগরা’ পয়েন্টে পৌঁছায়। এটি নাইক্ষ্যংদিয়ার বিপরীতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের এলাকা। কিন্তু এরপরও মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা বাংলাদেশের জলসীমায় এগিয়ে এসে গুলি করে। টানা ১০ থেকে ১২টি গুলি করার পর চালক বেলাল স্পিডবোটটি দ্রুতগতিতে বঙ্গোপসাগরের দিকে নিয়ে যান। পরে স্পিডবোটটি দুপুর ১২টার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে পৌঁছায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা জানান, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস ট্রলারে যাত্রী বা পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি জটিলতা রয়েছে। ট্রলারগুলো নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানমারের কাছাকাছি এলাকা অতিক্রম করে। আর তখনই ওপার থেকে গুলির ঘটনা ঘটে। ৫ জুন সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার সময় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এরপর ৮ জুনও পণ্যবাহী ট্রলারে গুলি করা হয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি জানান, বিষয়টি সব পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত মানুষ খাদ্যসংকটে পড়বে। ওই এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী নাকি বিদ্রোহীরা গুলি চালাচ্ছে, তা–ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় বদরমোকামের পাশে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে থেকে অস্ত্রধারীরা গুলি করছে। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে। আর কোনোভাবেই সেন্ট মার্টিনগামী সার্ভিস ট্রলার বা স্পিডবোট যেতে দিচ্ছে না। এসব ঘটনা নিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে দৈনন্দিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।