শরীয়তপুরের পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পরে জাজিরা উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ২৬০টি পরিবার তাঁদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে থাকা কুন্ডেরচর ইউনিয়নের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন গতকাল বুধবার ভেঙে ফেলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক মাস ধরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি ৩৫৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচে। নদীতে পানি ও স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় জাজিরার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা নদীর উত্তর তীরে কুন্ডেরচর ইউনিয়নের অবস্থান। ওই ইউনিয়নের বাবুরচর হাজিকান্দি থেকে ছিডারচর আডং এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় ২০০-৩০০ মিটার পর্যন্ত নদী ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে পরে গত এক মাসে ওই এলাকার ২৫০টি পরিবার তাঁদের বসত বাড়ির স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। এ এলাকার পাঁচটি গ্রামের ২৫০ একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
ছিডারচর এলাকার আবদুর রহমান গত সপ্তাহে তাঁর বাড়ির স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। গতকাল দুপুরে পদ্মার তীরে এসেছিলেন তাঁর শেষ সম্বল বাড়িটি দেখতে। তিনি বলেন, ‘বাড়িটিই ছিল আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। গবাদিপশু লালন–পালন করে ও ৫ বিঘা জমি বর্গা চাষ করে সংসার চালাতাম। নিজের বাড়ির সঙ্গে বর্গা চাষের জমিটিও বিলীন হয়েছে। এখন একদিকে আশ্রয়হীন ও অন্য দিকে বেকার হয়ে পরলাম।’
কুন্ডেরচরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গনি মল্লিকেরকান্দি এলাকায় পদ্মার চরাঞ্চলের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ছিল একটি কমিউনিটি ক্লিনিক। পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পরে তা নিলামে বিক্রি করে দেন উপজেলা প্রশাসন। গতকাল ওই ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়।
গনি মল্লিকেরকান্দি গ্রাম থেকে গতকাল বাড়ির স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন নুরুল আমীন মল্লিক। তিনি নদীর থেকে এক কিলোমিটার দূরে গ্রামটির শেষ প্রান্তে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। নুরুল বলেন, ‘বাড়ির পুরো জমিটি পদ্মায় গ্রাস করেছে। সেই সঙ্গে আমার পারিবারিক ১০ বিঘা জমিও বিলীন হয়ে গেছে।’
পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরের জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি গ্রাম অবস্থিত। এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের একটি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১০টি পরিবার তাঁদের বসত বাড়ির স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাঁদের বসতবাড়ির জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, গত মে মাসে জাজিরার নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট থেকে পালের চর বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ও বড়কান্দি ইউনিয়নের রাঢ়িকান্দি থেকে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। কিন্তু নদীর উত্তর তীরের কুন্ডেরচর এলাকায় ৫ কিলোমিটার ভাঙন হলেও সেখানে ভাঙন রোধের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, কুন্ডেরচরের কিছু এলাকায় গত বছর বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। এ বছর ভাঙন শুরু হলেও তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। তাঁরা একটি প্রকল্পের আওতায় ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করছেন।
কুন্ডেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন বলেন, কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ সীমানা ইতিমধ্যে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। বাকি ৬০ শতাংশ এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে পরেছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়ন পদ্মায় গ্রাস করে ফেলবে। গত এক মাসে ভাঙনের শিকার ২৫০ পরিবারের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। ভাঙনে বসতভিটা হারানো মানুষগুলো চরাঞ্চলের উঁচু রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছে।
ইউএনও সাদিয়া ইসলাম বলেন, নদীভাঙনের ঝুঁকি থাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবন নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। সেটার কার্যক্রম আপাতত বন্ধ আছে। শিগগিরই চরাঞ্চলে গিয়ে ওই কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।