ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনের আয় গত ১০ বছরে (২০১৪ থেকে ২০২৩) খুব একটা বাড়েনি। কিন্তু তাঁর ও স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। সংসদ সদস্যর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৮৬ হাজার গুণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণ।
আর ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি রানী সেনের আয়ের পাশাপাশি হাতে নগদ টাকার পরিমাণ শূন্য থাকলেও এবার হাতে নগদ টাকা এসেছে ২৫ লাখ ১০ হাজার ৯৬৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২০ লাখ টাকা ৫৮ হাজার ২৮৭ টাকা।
গত ৩০ নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন রমেশ চন্দ্র সেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া তাঁর হলফনামার সঙ্গে দশম ও নবম সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
রমেশ চন্দ্র সেন এবার নিয়ে একটি উপনির্বাচনসহ ষষ্ঠ দফায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন কৃষি ও ব্যবসা। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক পাস রমেশ চন্দ্র সেনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
হলফনামায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রমেশ চন্দ্র সেন তাঁর হলফনামায় কৃষি থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ টাকা ও সম্মানী বাবদ ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখানো হয়নি। সে সময় অস্থাবর সম্পত্তি হিসাবে রমেশ চন্দ্র সেনের হাতে ছিল নগদ ৩৫৯ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩ পয়সা।
এবার তাঁর হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৪৯৭ টাকা ৭৪ পয়সায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৫৩ লাখ ৭ হাজার ৬৭ টাকা। সে হিসাবে রমেশ চন্দ্র সেনের নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৮৬ হাজার ৩৫৫ গুণ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ ২০১৪ সালের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ। এ ছাড়া ২০১৮ নির্বাচনের সময় হলফনামায় বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ ছিল, এবার দেখানো হয়েছে ১০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় রমেশ চন্দ্র সেনের স্ত্রী অঞ্জলি রানী সেনের আয় ও অস্থাবর সম্পদ, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাব দেখানো হয়নি। তবে এবার অঞ্জলি রানী সেনের নামে ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, ব্যাংক থেকে মুনাফা ৫৪ হাজার ২২৪ টাকা, হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২৫ লাখ ১০ হাজার ৯৬৮ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ ৫৮ হাজার ২৮৭ টাকা দেখানো হয়েছে। আর দেখানো হয়েছে ২ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাব। এর আগে সংসদ সদস্যের স্ত্রীর নামে স্বর্ণালংকার না দেখালেও এবার তাঁর নামে যুক্ত হয়েছে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার।
২০১৪ সালে হলফনামায় রমেশ চন্দ্র সেনের দুটি জিপগাড়ি, একটি মোটরসাইকেল ও একটি ট্রাক্টর ছিল। যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় ১ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার ২৫৪ টাকা মূল্যের তিনটি জিপগাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল দেখান। কিন্তু এবারের হলফনামায় তিনি ২ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের একটি ট্রাক্টর ও একটি মোটরসাইকেলের দেখালেও জিপগাড়ির কথা উল্লেখ করেননি।
১০ বছরে রমেশ চন্দ্র সেনের কৃষি ও অকৃষিজমির পরিমাণ বাড়েনি। ২০১৪ সালের হলফনামায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক দালানের কলামটি ফাঁকা থাকলেও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের কলামে ঠাকুরগাঁও ও ঢাকায় একটি করে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের দেখানো হয়েছিল। ২০১৮ সালের হলফনামায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি আবাসিক বাড়ি ও ৬১ লাখ ৭ হাজার ১৪৩ টাকার মূল্যে ঢাকার উত্তরায় পাঁচটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়। আর এবার রমেশ চন্দ্র সেনের নামে ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়ায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকার মূল্যের বাড়ি, ঢাকার উত্তরায় ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯০ টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ জমির ওপর দোতলা বাণিজ্যিক ভবন দেখানো হয়েছে, যার নির্মাণ খরচ দেখানো হয়েছে ৬০ লাখ টাকা।
হলফনামার তথ্যের বিষয়ে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব সময় হলফনামায় সঠিক তথ্যই দিয়ে থাকি। এবারও আমার যা সম্পত্তি আছে হলফনামায় সেটাই দেখানো হয়েছে।’
২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় হাতে নগদ মাত্র ৩৫৯ টাকা দেখানো হয়েছিলো, আর এবার দেখানো হয়েছে ৩ কোটির ওপরে- এ তথ্য সঠিক কি না জানতে চাইলে রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘তখন হাতে নগদ টাকা কত ছিল, তা এখন মনে নাই।পুরোনো সেসব কাগজপত্র দেখে জানাতে পারব। তবে এবারে হাতে যে পরিমাণ নগদ টাকা ছিল, তা খরচ করার পর ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে।’