সীমান্ত এলাকার মানুষ যেন সচেতন থাকেন: বিজিবির কমান্ডার

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলমের সংবাদ ব্রিফিং। সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস চেকপোস্ট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য আমাদের আশ্রয়ে আছেন। তার মধ্যে কয়েকজন আহত আছেন। তাঁদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা তাঁদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তাঁদের দেখাশোনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর বিজিপি সদস্যদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

আজ সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী কাস্টমস চেকপোস্ট এলাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কে এ সংবাদ ব্রিফিং হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বলেন, ‘গতকাল রোববার সকালে হঠাৎ করে বিজিপি সদস্যরা সংঘর্ষের কারণে প্রাণ রক্ষায় বাংলাদেশে পালিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনামতে বিজিপি সদস্যদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় এবং তাঁদের অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি হেফাজতে আনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত এখন পর্যন্ত বন্ধ আছে। কোনো রোহিঙ্গা, কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

মোরশেদ আলম আরও বলেন, ‘আজ বেলা পৌনে তিনটার দিকে মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে দুজন সাধারণ মানুষ নিহত হন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তৎক্ষণাৎ মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের কাছে কঠোর প্রতিবাদ জানাই। বিজিবি সদর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে এবং মিয়ানমার সরকারের কাছে আমাদের কনসার্ন (উদ্বেগ) তারা তুলে ধরেছে। সীমান্ত এলাকার সাধারণ জনগণ যাতে সচেতন থাকেন। সীমান্ত এলাকায় লোকজন যাতে জমায়েত না হয়। সবাই যাতে নিরাপদ দূরত্বে থাকেন, আমরা সবাই সেদিকে লক্ষ রাখব।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোরশেদ আলম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের অভ্যন্তরে কয়েকটি মর্টার শেল এসে পড়ে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তারপরও বিজিবি বিষয়টি নিয়ে মিয়ানমার বিজিপির কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠায়। একই সঙ্গে সীমান্তে বিজিবির সতর্কাবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছি। পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করার পাশাপাশি গত শনিবার রাত থেকে তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ঘুমধুম এলাকায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও বিজিপির মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তে বিজিবির সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এতে বিজিবি সফল হয়েছে।’

আরাকান আর্মির হামলার মুখে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ভবনের পাশে আশ্রয় নেন

পালিয়ে এসেছেন মিয়ানমারের আরও ১১ সীমান্তরক্ষী

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে দিনভর সংঘাতের জেরে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ১১ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এ নিয়ে বিজিপির মোট ১০৬ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেন।

আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকালে তিনি ৯৫ সদস্য আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

শরিফুল ইসলাম বলেন, রোববার দিনভর নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার বিজিপির মধ্যে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এতে সংঘর্ষের জেরে রোববার সকাল থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিপির ১০৬ জন সদস্য অস্ত্রসহ তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। পরে তাঁরা বিজিবির কাছে আশ্রয় চাইলে বিজিবি হেফাজতে নেয়। বিজিবি তাঁদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। বিজিপির আহত সদস্যের চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।