নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। আজ দুপুরে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে
নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ। আজ দুপুরে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে

হাতের কাছের জিনিসপত্র নিয়েই আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ

বেলা একটা। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ। পানি মাড়িয়ে উপজেলাটির সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে দল বেঁধে আশ্রয়ের সন্ধানে আসছেন মানুষ। সঙ্গে তাঁরা নিয়ে যাচ্ছেন গ্যাসের চুলা, গ্যাস সিলিন্ডার, শুকনা খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি। আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে এই চিত্র দেখা যায়।

কথা হয় চৌমুহনী পৌরসভার করিমপুর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবদিনের সঙ্গে। স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে তিনি এসেছেন আশ্রয়ের সন্ধানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রথম আলোকে জয়নাল আবদীন বলেন, বাড়িতে উঠানে কোমরসমান পানি, আর ঘরের ভেতর হাঁটুপানি। ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই, তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে হাইস্কুলের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য যাচ্ছেন।

একই এলাকার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের সড়কের হাঁটুপানি মাড়িয়ে সামনে এগোতে দেখা যায় পঞ্চাশোর্ধ্ব মোহাম্মদ হারুনকে।  তিনি বলেন, বসতঘরের ভেতরে হাঁটুপানি। ঘরে বৃদ্ধ মা, তিন ভাই বোন ও স্ত্রী রয়েছে। তাঁদের নিয়ে কোথাও যে যাবেন, সে উপায় নেই। ঘরের খাবারও ফুরিয়ে এসেছে। তাই খাবারের সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়েছেন তিনি।

বেগমগঞ্জ পার হয়ে সেনবাগ উপজেলার দিকে যেতেই বন্যার একই চিত্র চোখে পড়ে। সেনবাগের এমপি রোডের মাথায় (হজনী খাল) দেখা যায়, নারী শিশুসহ একটি পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষায় আছেন গাড়ির। বেগমগঞ্জ উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা এই পরিবার সেনবাগ উপজেলা সদরে তাদের আত্মীয় বাড়িতে যাচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। গৃহকর্ত্রী জয়নব বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাড়িঘর সবটাই পানি নিচে। তাই সেনবাগে মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছেন। মেয়ের বাড়িতে নাকি এখনো পানি ওঠেনি। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন হাঁস–মুরগি ও কবুতর।

বেগমগঞ্জ-সেনবাগে টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের চৌমুহনী–মাইজদী অংশের একাধিক এলাকা। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে বন্যার পানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষজনের মধ্যে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলছে সবাই।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে জেলা শহর মাইজদী, বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভা একলাশপুর চৌমুহনী হাজিপুর লক্ষ্মীনারায়ণপুর রসুলপুর এলাকার ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গাতেই বাড়িঘরে, কোথাও কোমরপানি, কোথাও হাঁটুপানি।

জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ভরা রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। অতি বর্ষণের কারণে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র অনেকটা পানিতে ডুবে আছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি খুবই সংকটময়। প্রায় সব এলাকাতেই হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি।

মানুষজন চরম কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন।

এরই মধ্যে প্রায় ১০ হাজারের বেশি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

একলাশপুর উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন কোনো সরকারি সহায়তা না পাওয়া প্রসঙ্গে ইউএনও আরিফুর রহমান জানান, সরকারিভাবে তিনি এখনো তেমন বরাদ্দ পাননি। যেটুকু পেয়েছেন, সেটির সঙ্গে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আরও কিছু যোগ করে, সাড়ে তিন হাজার প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন।