ফরিদপুরের সালথা উপজেলার যদুন্দী ইউনিয়নে অবস্থিত নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর রহমানকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। এলাকার দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির ইন্ধনে কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ও বহিরাগত এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে কলেজে এ ঘটনা ঘটে। জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিচুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে সন্ত্রাসী কায়দায় অধ্যক্ষকে মারধর ও তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান কলেজে যোগদানের পর থেকে দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থন না করে কলেজের ছাত্রদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করিয়েছিলেন তিনি। সরকার পতনের পর থেকে তাঁরা এই দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ও তাঁর ছেলে কলেজে প্রবেশ করার সময় স্থানীয় প্রভাবশালী কাইয়ুম মোল্লা ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল গাজীর সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের একটি বাগানের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে কিছু অছাত্র আর ছাত্রকে দিয়ে জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য কামরুল গাজী বলেন, তিনি ওই সময় ফরিদপুরে ছিলেন। তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না।
কাইয়ুম মোল্লা বলেন, এ এলাকা দুই ভাগে বিভক্ত। এ পক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রউফ। আরেক অংশের নেতৃত্ব দেন তিনি নিজে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ওই অধ্যক্ষ তাঁর (কাইয়ুম) সমর্থিত ছাত্রদের নাম পুলিশে দিয়ে তাঁদের হয়রানি করেছেন। এসবের জেরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
ইউএনও আনিচুর রহমান বলেন, অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থীরা একটি মানববন্ধন করে। খবর পেয়ে তিনি সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়নি। পরে ঘটনাটি তাঁরা মীমাংসা করে দেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আর আন্দোলন করবে না মর্মে লিখিত দেয়। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে সন্ত্রাসী কায়দায় অধ্যক্ষকে মারধর ও তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি জানতে পেরেছেন, স্থানীয় দুই ব্যক্তির ইন্ধনে শিক্ষার্থী ও কিছু দুষ্কৃতকারী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।