নাজিরপুর বিএনপি: উপজেলা রাজনীতি ৮

নেতৃত্ব-সংকটে দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। সদস্যসচিব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হওয়া মামলায় কারাগারে আছেন।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ঢাকায় ও সদস্যসচিব আবু হাসান খান কারাগারে থাকায় দলীয় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ এপ্রিল রাতে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের একটি কপি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। এ নিয়ে দলের একটি পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল করিম বলেন, আহ্বায়ক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেন না। এ কারণে ৮ ও ১২ এপ্রিল কেন্দ্রঘোষিত বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি নাজিরপুরে পালিত হয়নি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জানুয়ারি মিজানুর রহমান আহ্বায়ক ও আবু হাসান খানকে সদস্যসচিব করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা কমিটি। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় আবু হাসান খান কারাগারে রয়েছেন। আবু হাসান খানের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপত্তিকর লেখা ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন খান।

এদিকে মিজানুর রহমান আহ্বায়ক হওয়ার পর দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দুই মাস আগে মিজানুর রহমান এক ঘরোয়া সভায় দলের নেতা-কর্মীদের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে এলাকার গর্ব উল্লেখ করে তাঁর সমালোচনা না করার জন্য অনুরোধ করেন। এ ছাড়া মিজানুর রহমান দাবি করেন তিনি দলের আহ্বায়ক হতে চাননি। জেলা বিএনপির নেতারা তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে আহ্বায়কের চিঠি পৌঁছে দেন। মিজানুর রহমানের ওই বক্তব্যর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ এপ্রিল রাতে মিজানুর রহমান দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের কপি ফেসবুকে পোস্ট করেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে লেখা পদত্যাগপত্রে মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি অসুস্থ থাকায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। তাই ১২ এপ্রিল আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

দলের চারজন নেতা বলেন, মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে সংগঠনবিরোধী বক্তব্যসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। মিজানুর দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন, এমন আশঙ্কায় তিনি আগেই নিজে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এসব বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছিলাম। তবে গত সোমবার বিএনপির মহাসচিব ডেকে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর উনি আমাকে এই পদ থেকে সরে যেতে নিষেধ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, পুলিশের বাধার কারণে কর্মসূচি পালন করা যায় না। তিনি ঢাকা থেকে প্রায়ই এলাকায় যান।

মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সরদার সাফায়েত হোসেন বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি হওয়ার পর কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করা হয়নি। কিছুদিন আগে মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা করার জন্য আমরা মিজানুর রহমানের মাটিভাঙ্গার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করি। তিনি পুলিশি হয়রানির অজুহাত দেখিয়ে ঢাকায় চলে যান। এতে ওই কর্মসূচি আর পালিত হয়নি।