ফরিদপুরের সালথা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক (৪৫), উপপরিদর্শক (এসআই) তন্ময় চক্রবর্তীসহ (৩৫) আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে চাঁদাবাজির এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর আজ বৃহস্পতিবার সালথার ভাওয়ার গ্রামের বাসিন্দা মো. হাফিজুর রহমান (৬৫) বাদী হয়ে ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলার আবেদন জানান। আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী হাফিজুর রহমান গ্রামীণ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। তাঁর ভাই মৃত আতিয়ার রহমান সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
সাবেক ওসি শেখ সাদিক (৪৫) চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার বারাদি গ্রামের বাসিন্দা। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সালথা থানায় কর্মরত ছিলেন।
তন্ময় চক্রবর্তী (৩৫) রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ভররামদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে বোয়ালমারী থানায় এসআই হিসেবে কর্মরত। এ মামলার এজাহারে অপর ছয় আসামিকে অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে হাফিজুর রহমান গ্রামে ফিরে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাঁকে ওসি শেখ সাদিক ও এসআই তন্ময় বিভিন্ন সময় হুমকি দিতেন। তাঁরা বলতেন, হাফিজুর অনেক টাকা উপার্জন করে গ্রামে এসে রাজনীতি করছেন। এখন তাঁদের ২০ লাখ টাকা চাঁদা দেবেন, নইলে শান্তিতে থাকতে পারবেন না। তিনি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২০২৩ সালের ১১ মার্চ রাতে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি প্রাণভয়ে তাৎক্ষণিক পাঁচ লাখ টাকা দেন। এরপরও তাঁরা তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে রাতভর নির্যাতন করেন। পরদিন একটি বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
হাফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ওই মামলায় আদালত থেকে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। সে সময় নানা ভয়ের কারণে তিনি মামলা করতে পারেননি। এখন অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হওয়ায় তিনি মামলাটি করেছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মামুন অর রশীদ বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে করা এ মামলা আদালত আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সালথা থানার সাবেক ওসি শেখ সাদিক বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত। আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাদিক বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। আমি চাকরিজীবনে সততার সঙ্গে কাজ করছি। টাকা তো দূরের কথা, একগ্লাস পানিও কারও কাছ থেকে পান করিনি। যে ব্যক্তি এ মামলা করেছেন, তাঁকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, জানি না, পরিচয়ও নেই। তিনি কেন ও কোন উদ্দেশ্যে মামলাটি করেছেন, তা আমার বোধগম্য নয়।’