গৌরনদীতে এবার পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা, আহত ১৩

হামলায় আহত একজনকে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে তোলা
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। এবার পরাজিত প্রার্থীর ১৩ জন সমর্থককে মারধর ও কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে জয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার গৌরনদী পৌরসভা ও উপজেলার চারটি ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় অন্তত তিনজন গৌরনদী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। গুরুতর আহত পাঁচজনকে বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে গত রোববার রাতে দিয়াসুর গ্রামে বিজয়ী প্রার্থীর ১৫ সমর্থককে পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি তাঁদের বাড়ি, দোকান ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে পরাজিত প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

রোববার গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া জয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র হারিছুর রহমান। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই দুই পক্ষের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়েছে।

উপজেলার চাদশী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নয়ন খান বলেন, ‘সোমবার রাতে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে পশ্চিম শাওড়া মোল্লাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিয়ার সমর্থক মেহেদী হাসান (৫২), জসিম শরীফ (৩৮) ও সৈয়দ জসিম (৪৫) লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর হামলা করেন।’

গতকাল রাতে উপজেলার দক্ষিণ মাঠে সেতুর ওপর হামলার শিকার হন চাদশী ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি শাহাদত হোসেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিজয়ী প্রার্থী মনির হোসেন মিয়ার সমর্থক জসিম শরীফ (৩৮), সৈয়দ জসিম (৪৫) ও মেহেদী হাসান (৫২) রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে রক্তাক্ত করেছেন। তাঁর বাঁ হাত ভেঙে গেছে।
গুরুতর আহত নয়ন খান ও শাহাদত হোসেনকে শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’  

সোমবার সকালে আমি রামসিদ্ধি বাজারে পৌঁছালে মনির মিয়ার ১০–১২ জন সমর্থক হামলা চালিয়ে পিটিয়ে আমাকে আহত করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে।
আজিজুল ইসলাম, বার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

বার্থী ইউপির সদস্য করিম লস্কর অভিযোগ করেন, গতকাল বিজয়ী প্রার্থী মনির হোসেন মিয়ার সমর্থক ও বার্থী ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি জাফর প্যাদার (৩৫) নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বার্থী রাজারে তাঁর একটি দোকান দখল নিয়ে তালা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাফর প্যাদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

হামলায় আহত হয়েছেন বার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, ‘সোমবার সকালে আমি রামসিদ্ধি বাজারে পৌঁছালে মনির মিয়ার ১০–১২ জন সমর্থক হামলা চালিয়ে পিটিয়ে আমাকে আহত করে। একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে।’

আহত আজিজুলকে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।


যুবলীগ কর্মী ও হারিছুর রহমানের সমর্থক মিরাজ মল্লিক জানান, তিনি তাঁর বাবা টুটু মল্লিককে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে দিয়াশুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে মনির মিয়ার সমর্থক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ইখতিয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১০–১২ জন হামলা করেন। তাঁকে শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তাঁর বাবাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর ইখতিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়িতে ও গ্রামে হারিছুরের সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে ১৫টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটসহ তাণ্ডব চালিয়েছেন। সেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে এখন তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’  

হারিছুর রহমান নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কয়েক শ সন্ত্রাসী নিয়ে দিয়াসুর গ্রামে হামলা চালিয়ে আমার সমর্থকদের ১৫–২০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করেছেন। সেই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং ধামাচাপা দিতে তাঁরা এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।
মনির হোসেন মিয়া , উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান

এ ছাড়া পরাজিত প্রার্থী হারিছুর রহমানের সমর্থক বার্থী ইউনিয়নের গ্রামের রাব্বি সরদার, মাছের আড়তদার সিরাজ হাওলাদার, পৌর এলাকার কাছেমাবাদ মহল্লার মৃদুল সরদার, শরিকল ইউনিয়নের শরিকল গ্রামের টিপু মৃধা, কুড়িরচর গ্রামের মফছের ফকির ও ছাত্রলীগ কর্মী মহিবুল ইসলাম, নলচিড়া ইউনিয়নের কান্ডপাশা গ্রামের মিলন মিয়া ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদস্য উজ্জ্বল হোসেনকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মনির হোসেন মিয়া বলেন, ‘হারিছুর রহমান নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কয়েক শ সন্ত্রাসী নিয়ে দিয়াসুর গ্রামে হামলা চালিয়ে আমার সমর্থকদের ১৫–২০টি বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করেছেন। সেই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং ধামাচাপা দিতে তাঁরা এসব মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। একাধিক ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।