জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দ্রুত প্রত্যাবাসন চান রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে ‘গণহত্যা’ দিবসের সমাবেশের আয়োজন করেন রোহিঙ্গারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা দ্রুত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরতে চান। ১০০-২০০ করে নিলে হবে না, একসঙ্গে পুরো একটি গ্রাম নিয়ে যেতে হবে। রাখাইন রাজ্যের যে গ্রাম থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, ওই গ্রামেই পুনর্বাসন করতে হবে রোহিঙ্গাদের। ফিরিয়ে দিতে হবে নাগরিকত্বসহ রাখাইনে স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার। অন্যথায় কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন না।

আজ বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে ‘গণহত্যা’ দিবসের সমাবেশে এসব কথা তুলে ধরেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার নুরুল আমিন। আশ্রয়শিবিরের চার রাস্তার মাথা এলাকায় আয়োজিত এ সমাবেশে অন্তত ১৫ হাজার রোহিঙ্গা অংশ নেন। রাখাইন রাজ্য থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে আজ ‘গণহত্যা’ দিবস পালন করেন রোহিঙ্গারা। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর রোহিঙ্গারা দিবসটি পালনের অনুমতি পাননি। তবে এবারের সমাবেশ আয়োজনে বাধা দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কঠোর নিরাপত্তায় লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের গণসমাবেশ শুরু হয় সকাল ১০টায়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আমিন, জুবাইর আহমদ, জামাল হোসেন, কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন, বালুখালী আশ্রয়শিবিরের হেডমাঝি (নেতা) মো. রফিক প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। পাশাপাশি ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে পাঁচ বছর ধরে মানবিক আশ্রয় এবং নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তাঁরা।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা জুবাইর বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা রাখাইনের জন্মভূমিতে ফিরতে চান। আজকের সমাবেশ থেকেও আমরা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু শর্ত আছে। একসঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ১০০-২০০ জন করে পাঠালে হবে না। পাঠালে পুরো একটা গ্রাম ধরে পাঠাতে হবে। পুরো এক গ্রামের লোকজনকে একসঙ্গে পাঠানো গেলে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকবে না।’

রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নে নিহত স্বজনদের জন্য প্রার্থনা করছেন রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে শুরু থেকে তৎপর ছিলেন রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ। তিন বছর আগে গণহত্যা দিবসে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে মহাসমাবেশটি করেছিলেন মুহিবুল্লাহ। কিন্তু প্রত্যাবাসন থামিয়ে দিয়ে অস্ত্রধারীরা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে। মুহিবুল্লাহর রক্ত বৃথা যাবে না। মুহিবুল্লাহর স্বপ্ন বাস্তবায়নে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে হবে।

এদিকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তায় উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, থাইনখালী, জামশিয়া, টেকনাফের শালবন, জাদিমুরা, নয়াপাড়া, উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি চলে। বালুখালী আশ্রয়শিবিরের ফুটবল মাঠের সমাবেশেও ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। সেখানেও নাগরিকত্ব, রাখাইনে ফেলে আসা ধনসম্পদ-জায়গাজমি ফেরত, কারাগারে বন্দী রোহিঙ্গাদের মুক্তিসহ নানা দাবি উত্থাপন করেন রোহিঙ্গা নেতারা।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কামরান হোসেন বলেন, নাশকতাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আশ্রয়শিবিরে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা দিবসের কর্মসূচি শেষ হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেনা অভিযানের পরের পাঁচ মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর আগে থেকেই আছে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।