কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

‘এখানে থাকা, না থাকার অর্থ একই’ লিখে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলোর ফাইল ছবি

আলোচ্যসূচিবহির্ভূত ও বেআইনিভাবে ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক শেখ মকছেদুর রহমান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব মো. আমিরুল হক চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

মো. আমিরুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র পেয়েছি। সেটি উপাচার্য মহোদয়কে জানানো হবে।’

পদত্যাগপত্রে অধ্যাপক শেখ মকছেদুর রহমান উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় আলোচ্যসূচি না থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একাধিক সিন্ডিকেট সদস্যের আপত্তি সত্ত্বেও বিশেষ ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে পরিকল্পিতভাবে ডিন মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু দুঃখজনকই নয়, বিধিবহির্ভূতও বটে।

অধ্যাপক শেখ মকছেদুর রহমান পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্ভূত অনিয়ম ও সমস্যা সমাধানের জন্য গত ২৫ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি, পরে ৫ ও ১৩ মার্চ লিখিত চিঠি দেয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সমস্যা সমাধানের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এর ফলে শিক্ষকেরা নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমিও বিড়ম্বনার শিকার। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করছি, সিন্ডিকেট সভায় মতামত প্রদানের সুযোগ খুবই সীমিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মতামত প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। এখানে সদস্য হিসেবে থাকা বা না থাকা একই অর্থ বহন করে। মূলত সিন্ডিকেট সদস্যদের সভায় কোরাম পূর্ণ করার জন্য রাখা হয়েছে। সচেতন নাগরিক হিসেবে যা অস্বস্তিকর। এ অবস্থায় আমি সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করেছি।’

অধ্যাপক শেখ মকছেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটে মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। সিন্ডিকেটের অ্যাজেন্ডা এক, সভায় অংশ নিয়ে দেখি আরেকটা। এটা হতে পারে না। সিন্ডিকেটে বেআইনিভাবে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪ মার্চ বেলা দুইটা থেকে বিকেল প্রায় চারটা পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবি ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি কেন্দ্র করে অনলাইনে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে সভায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও উপাচার্য পাঁচটি অনুষদে ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য নিয়োগ দেন।

শিক্ষকদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট সভা শুরুর পর আলোচ্যসূচি বদল হওয়ার নজির নেই। উপাচার্য উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সভা ডেকে ডিন নিয়োগ দেন। আলোচ্যসূচি পরিবর্তন করেন। ডিন নিয়োগের জন্য জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডাকতে হয় না। পছন্দের ব্যক্তিকে ডিন পদে নিয়োগ দিতেই উপাচার্য আলোচ্যসূচি বদল করেছেন।

এর আগে উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের হেনস্তার ঘটনায় ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক মো. কামরুল হাসান। শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অশিক্ষকসুলভ আচরণের প্রতিবাদে একই দিন হাউস টিউটরের পদ ছাড়েন পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কুলছুম আক্তার। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের প্রতি অন্যায্য আচরণের প্রতিবাদে সহকারী প্রক্টরের পদ ছাড়েন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষের পদ ছাড়েন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক তোফায়েল হোসেন মজুমদার।