মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার আতিয়াবাগ চা-বাগানে সমান মজুরির দাবিতে ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া বাগানটিও খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বাগানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম আবার সচল হয়েছে। এর আগে অচলাবস্থার নিরসনে গতকাল মঙ্গলবার একটি সমঝোতা বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান ‘আকিজ টি কোম্পানি’ আতিয়াবাগ বাগানটি পরিচালনা করছে। সোনারুপা ও ধামাই নামের একই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরও দুটি চা-বাগান আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় ও পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলামের মধ্যস্থতায় গতকাল সকালে ধামাই বাগানের ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকটি শুরু হয়। এতে তিনটি বাগানের দায়িত্বে থাকা কোম্পানির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কাজল মাহমুদ, আতিয়াবাগ বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম জমাদ্দার, আতিয়াবাগের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ভোজন মুন্ডা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে। সামনে পৌষসংক্রান্তি উৎসব। বৈঠকে বাগানের কর্মকর্তারা বলেন, এ উৎসবের পর তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের দাবিদাওয়া পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। শ্রমিক নেতারা তা মেনে নেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মঘট প্রত্যাহার ও বাগানটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের পর শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন।
শ্রমিকেরা বলেন, আতিয়াবাগে ‘বি’ শ্রেণির এই বাগানে ২৪২ জন স্থায়ী ও ১৩০ জন অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন। সরকার ২০২৪ সাল থেকে প্রতিবছর শ্রমিকদের মজুরি ৫ শতাংশ (৮ দশমিক ৫০ টাকা) করে বৃদ্ধির গেজেট ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ী, আতিয়াবাগের স্থায়ী শ্রমিকেরা দৈনিক মজুরি ১৭৭ দশমিক ৪৫ টাকা করে পেলেও অস্থায়ী শ্রমিকেরা মাত্র ১৬৯ টাকা করে মজুরি পান। তাঁদের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। এ ছাড়া কোনো বাগানে পরপর ৩ বছর ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হলে এটিকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীত করার নিয়ম আছে। গত তিন বছরে আতিয়াবাগ বাগানে গড়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার কেজি চা উৎপাদিত হয়। ফলে বাগানটি ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়ে প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি ১ দশমিক ৫ টাকা করে বৃদ্ধি পেত, কিন্তু তা-ও করা হয়নি। সমান মজুরি ও বাগানকে ‘এ’ শ্রেণিতে উন্নীত করার দাবিতে ৩ জানুয়ারি থেকে শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন। পরে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানটিও বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বাগানে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।