নাটোর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট যাচাই করা নিয়ে বিবাদের জের ধরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) দুই সদস্যকে র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব বলছে, স্টেশনের একটি কক্ষে ট্রেনযাত্রী এক র্যাব সদস্যকে আটক রেখে মারধর করেন দুজন আরএনবি সদস্য। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
নাটোর স্টেশনের আরএনবি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে স্টেশনে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সাদাপোশাকের র্যাব সদস্য আল মামুনের কাছে টিকিট দেখতে চান দায়িত্বরত আরএনবি সদস্যরা। স্টেশন ফটকে তিনি টিকিট না দেখিয়ে ক্ষুব্ধ হন। তিনি ফটকের বাইরে নিজের ব্যাগ রেখে এসে নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশ্ন করেন, ‘তোমরা টিকেট দেখার কে?’ একপর্যায়ে তিনি রেলের নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন। নিরাপত্তাকর্মীরা র্যাব সদস্যকে টিসির (টিকিট কালেক্টর) কামরায় নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে জানা যায় যাত্রী আল মামুন র্যাব-৫ (রাজশাহী) অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পে কর্মরত। এর কিছুক্ষণ পর নাটোর র্যাব ক্যাম্পের (সিপিসি-২) ১০–১২ জনের একটি দল সেখানে আসে। এরপর মীমাংসার কথা বলে আরএনবির সিপাই মোক্তার হোসেন ও জিয়াউর রহমানকে র্যাব ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যান।
নাটোর স্টেশনের আরএনবি ইনচার্জ মোতালেব হোসেন বলেন, রেলের রাজস্ব আদায়ের জন্য আরএনবি সদস্য দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ জন্য তাঁদের পোশাক পরিহিত অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা ক্ষমতার চরম অপব্যবহার।
বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (পাকশী) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, রেলের টিকিট দেখতে চাইলে আরএনবি সদস্যদের সঙ্গে ওই র্যাব সদস্য যাত্রীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে ওই যাত্রীকে টিসি রুমে নিয়ে গেলে নাটোর র্যাব অফিস থেকে পোশাক পরা র্যাব সদস্যরা এসে ডিউটিরত অবস্থায় দুজন আরএনবি সদস্যকে প্রভাব খাটিয়ে তুলে নিয়ে যান। তারপর র্যাব অফিসে নিয়ে গিয়ে চোখে কালো কাপড় পেঁচিয়ে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁদের র্যাবের গাড়িতে করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দুজনকে সান্তাহার জিআরপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নুর মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে এভাবে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
এ বিষয়ে র্যাব-৫–এর অধিনায়ক মো. মুনীম ফেরদৌস গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘একজন ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে দুজন আরএনবি সদস্য একটা রুমে আটকিয়ে মারধর করে। ওই ভুক্তভোগী একজন র্যাব সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কেন্দ্রের। ওই ভুক্তভোগী মামলা করবেন এবং তার ব্যক্তিগত প্রতিকারের জন্য ওই দুজনকে র্যাবের টহল দল গিয়ে নিয়ে এসেছে।’
আরএনবি সদস্যদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘আরএনবি সদস্যরাই আমাদের একজন সদস্যকে মারধর করেছে। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গেছে, মাথায় আঘাত করেছে। রুমে নিয়ে গিয়ে বেল্ট খুলে মারধর করেছে, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেছে। এখানে র্যাবের কোনো বিষয় নাই, একজন ব্যক্তি ভুক্তভোগী, সে ব্যক্তি মামলা করবে। সেই ব্যক্তির প্রতিকারের জন্যই আমরা কাজ করছি।’ এসব বিষয় রেলের মহাপরিচালককে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সান্তাহার রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোক্তার হোসেন বলেন, র্যাবের সদস্যরা রাতে দুজন আরএনবি সদস্যকে সান্তাহার থানায় জমা দিয়েছেন এবং করপোরাল আল মামুন লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। যেহেতু দুটি বাহিনীর বিষয়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। দুই আরএনবি সদস্যকে তাঁদের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।