পাঁচ বছর ধরে নওগাঁর সাপাহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান হোসেন। এ সময়ে তাঁর হাতে নগদ টাকা প্রায় ২৯ গুণ বেড়েছে। তবে ছেলে–মেয়েদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়ায় তাঁর স্থাবর সম্পদ কমেছে। নির্বাচন কমিশনে তাঁর জমা দেওয়া ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এইচএসসি পাস শাহজাহান হোসেন এবারের হলফনামায় পেশায় নিজেকে কৃষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তবে ২০১৯ সালের হলফনামায় তিনি নিজেকে কৃষক ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
শাহজাহানের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে কৃষি খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। বাড়ি, দোকানভাড়া থেকে আয় হতো এক লাখ টাকা। এ ছাড়া ব্যবসা থেকে পাঁচ বছর আগে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৭ লাখ ২৯ হাজার ৩০৬ টাকা। অর্থাৎ এই ৩ খাতে ২০১৯ সালে তাঁর মোট বার্ষিক আয় ছিল ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩০৬ টাকা। এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, শাহজাহানের বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকা। এই টাকা তিনি কৃষি খাত থেকে আয় করেছেন। ব্যবসা কিংবা অন্যান্য খাত থেকে তিনি কোনো আয় উল্লেখ করেননি। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি যে সম্মানী পান, সেটাও হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৯ সালে শাহজাহান নগদ ৮০ হাজার টাকার মালিক ছিলেন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এখন তাঁর হাতে নগদ টাকা আছে ২৩ লাখ। অর্থাৎ তাঁর হাতে নগদ অর্থ বেড়েছে প্রায় ২৯ গুণ। আগে তাঁর ব্যাংকে তিন লাখ টাকা জমা থাকলেও এখন আছে সাত লাখ টাকা।
নগদ টাকা বাড়ার বিষয়ে শাহজাহান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসারের সব খরচ এখন আমার ছেলেরাই চালায়। তাই চেয়ারম্যানের সম্মানী ভাতা ও যৌথ মালিকানায় থাকা জমিতে করা আমবাগান এবার লিজ দিয়ে যে টাকা আয় হয়েছে, তার সবটুকুই আমার হাতে ক্যাশ ও ব্যাংকে জমা আছে। সব টাকাই বৈধভাবে কামাই করা।’
শাহজাহান আয়ের অংশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে পাওয়া সম্মানীর তথ্য উল্লেখ না করলেও অস্থাবর সম্পদের বিবরণীতে এবারের হলফনামায় লিখেছেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার সম্মানী ভাতা তাঁর কাছে আছে। এ ছাড়া তাঁর কাছে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা দামের ১টি মোটরসাইকেল, ১ লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন আসবাব এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার আছে। ২০১৯ সালের হলফনামায় ১টি মোটরসাইকেল, বিভিন্ন আসবাব ও স্ত্রীর নামে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন। যেগুলোর কোনো আর্থিক মূল্য তিনি উল্লেখ করেননি।
তবে এই পুরো সময়ে হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, শাহজাহান হোসেনের স্থাবর সম্পদ কমেছে। ২০১৯ সালে তিনি ২৯ লাখ টাকা মূল্যের ১০ একর কৃষিজমি, ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩ একর অকৃষিজমি, ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২টি দালানবাড়ি এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩ একর আয়তনের একটি আমবাগানের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে এবার দাখিল করা হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, শাহজাহান হোসেনের কোনো কৃষি বা অকৃষিজমি নেই। স্থাবর সম্পদ বলতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি বাড়ির কথা উল্লেখ করেছেন। স্ত্রী ও সন্তানদের নামেও তিনি কোনো সম্পদের কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
স্থাবর সম্পদ কমে যাওয়ার বিষয়ে শাহজাহান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো কিছু গোপন করি নাই। হলফনামায় যা উল্লেখ করেছি, সেটাই ঠিক আছে। কয়েক বছর আগে আমার নামে থাকা কিছু কৃষি ও অকৃষিজমি ছেলে-মেয়েদের নামে লিখে দিয়েছি। আর কিছু যৌথ মালিকানায় আছে। এ জন্য আমার নিজের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ কমে গেছে।’
২১ মে সাপাহার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। চেয়ারম্যান পদে শাহজাহান হোসেন ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন সাপাহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম শাহ চৌধুরী ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নার্গিস সরকার।