শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিসার গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানী মন্দির প্রাঙ্গণে সাত দিনব্যাপী বৈশাখি মেলা শুরু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত।
মেলা উপলক্ষে সনাতন ধর্মের নারীরা উপবাস ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে দেশ, জাতি ও সংসারের মঙ্গল কামনা করেন। মেলায় নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার বুড়িরহাট গ্রামের গৃহবধূ পিংকি রানী দাস পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শনিবার দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানী মন্দিরে পূজা দিতে এসেছেন।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবারের সবাই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। তখন মানত করেছিলাম, সুস্থ হয়ে সবাই মিলে মায়ের বাড়িতে পূজা-অর্চনা করব। আজ এসেছি, মনে অনেক আনন্দ লাগছে। দেশ, জাতি ও জগৎ–সংসারের সবার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছি।’
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার গৃহবধূ শম্পা রানী এসেছেন শিশুসন্তান নিয়ে। তাপদাহের মধ্যে ক্লান্ত দেহে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন অশ্বত্থগাছের ছায়ায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্তানের রোগমুক্তির জন্য মানত করেছিলাম। তাই আজ সন্তানকে নিয়ে পূজা করেছি। অশ্বত্থ-বটের যুগল গাছের তলায় সন্তানের চুল দান করেছি। এখন মনে অনেক শান্তি লাগছে।’
শ্রীশ্রী দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানী মন্দির কমিটি সূত্র জানায়, ভেদরগঞ্জের মহিসার গ্রামে একটি বিশাল আকৃতির দিঘি রয়েছে। শত শত বছর আগে ওই দিঘির আশপাশে ছিল বনজঙ্গল। বনের মধ্যে অশ্বত্থ-বটের যুগল গাছের নিচে ধ্যান করতেন দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানী। ওই দিঘিতে নেমে একদিন নিরুদ্দেশ হন তিনি।
এরপর চারদিকে এ ঘটনা জনশ্রুতি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিঘির পাড়ে অশ্বত্থ-বটের যুগল গাছের তলায় কালের বির্বতনে স্থাপন করা হয় মন্দির। এর পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি শনি ও মঙ্গলবার দিঘিতে স্নান সেরে পূজা-অর্চনা করে আসছেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাংলা বছরের শুরু ১৫ এপ্রিল। রোগবালাই থেকে মুক্তি এবং বিপদ ও দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে শ্রীশ্রী দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানী মন্দিরে নানা ধরনের মানত করেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা। মানত অনুযায়ী তাঁরা এদিন অশ্বত্থ-বটের তলায় পূজা-অর্চনার জন্য জড়ো হন।
পূজা উদ্যাপন পরিষদের ভেদরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি কুশল চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, পূজা-অর্চনা উপলক্ষে মন্দিরের বিশাল চত্বরজুড়ে মেলা বসেছে। মেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খাবার, তৈজসপত্র, শিশুদের খেলনাসহ নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এ ছাড়া শিশুদের জন্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন আনন্দ–উপকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। পূজা ও মেলা উপলক্ষে ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণ।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিতেন চন্দ্র রায় প্রথম আলোকে বলেন, এ অঞ্চলের বিভিন্ন ইতিহাস ও ঐতিহ্যবিষয়ক বিভিন্ন লেখা থেকে আমরা যে তথ্য পেরেছি, তাতে জানা গেছে, এখানকার অশ্বত্থ-বটের যুগল গাছের তলায় ১ হাজার ২০০ বছর আগে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা-অর্চনা করে আসছেন। দ্বিগম্বরী মাতা ঠাকুরানীর কাছে মানত করলে সব বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়—এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখানে পূজা করতে আসেন। এ পূজা-অর্চনা ঘিরে পয়লা বৈশাখ থেকে সাত দিনের মেলার আয়োজন করা হয়।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, মেলা ও পূজা উপলক্ষে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সে জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ ও আনসার মোতায়েন রাখা হয়েছে।