চুয়াডাঙ্গায় এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে উপপরিচালকের ওপর চাপ দিচ্ছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে
চুয়াডাঙ্গায় এক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে উপপরিচালকের ওপর চাপ দিচ্ছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে

চুয়াডাঙ্গায় বদলির আদেশ প্রত্যাহারে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে কৃষকদের অবস্থান, পরে মুক্ত

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামের বদলির আদেশ বাতিলের দাবিতে খামারবাড়িতে কৃষকদের অবস্থান, উপপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখাসহ দিনভর নানা ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার নানা নাটকীয়তা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের নেতাদের হস্তক্ষেপে ওই কর্মকর্তারা বিকেলে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হন এবং উত্তেজনার অবসান হয়।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম আট বছর ধরে সদর উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ৫ ডিসেম্বর তাঁকে চুয়াডাঙ্গা থেকে মাগুরায় বদলি করা হয়। আদেশটি তিনি ৯ ডিসেম্বর হাতে পান। তাঁর ওই বদলির আদেশ ঠেকাতে কয়েক শ কৃষক সংগঠিত হয়ে আজ আন্দোলনে নামেন।

সকাল ১০টার দিকে কয়েক শ কৃষক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে ‘আমিরুল ইসলামকে কৃষকবান্ধব কর্মকর্তা’ দাবি করে তাঁর বদলির আদেশ প্রত্যাহারে হস্তক্ষেপ চান। জেলা প্রশাসক আন্দোলনকারীদের জানান, সরকারি চাকরিতে বদলি স্বাভাবিক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করা বা ঠেকানোর দায়িত্ব তাঁর নয়। এ জন্য তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ করেন।

আন্দোলনকারী কৃষকেরা প্রায় এক ঘণ্টা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে অবস্থান শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে যান। উপপরিচালক মো. মাসুদুর রহমান এ সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত সভা করছিলেন। সভা চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে কৃষক প্রতিনিধি পরিচয়ে একদল নারী-পুরুষ সভাকক্ষে ঢুকে পড়েন এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহারের জন্য উপপরিচালককে চাপ দেন। পরিচালক আন্দোলনকারীদের শান্ত হতে অনুরোধ করেন এবং বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের সিদ্ধান্তে হয়েছে বলে জানান। তখন তিনি আন্দোলনকারীদের দাবি লিখিত আকারে দিতে বলেন। এতে কৃষক প্রতিনিধিরা আরও ক্ষুব্ধ ও উপপরিচালকের দিকে মারমুখী হয়ে ওঠেন। সেই সঙ্গে উপপরিচালককে দিয়ে আমিরুলের বদলির আদেশ স্থগিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠাতে ও অনুলিপি দিতে বাধ্য করেন।

খবর পেয়ে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারদিন বাবুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং কৃষকদের শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর আন্দোলনকারীরা আবার চড়াও হন। প্রতিকূল অবস্থায় উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বেলা ২টার দিকে সভা বন্ধ করে অধীন কর্মকর্তাদের নিয়ে নিজ কক্ষে চলে যান। এরপর সেখানে (উপপরিচালকের কক্ষে) কৃষকেরা গিয়ে ভিড় করেন এবং কর্মকর্তাদের একপ্রকার জিম্মি করে নানা হুমকি দেন। উপপরিচালকের কাছে তাঁরা দাবি করেন, আমিরুলের বদলির আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার আগে তাঁরা কোনোভাবেই খামারবাড়ি ছাড়বেন না। এভাবে আরও ঘণ্টাখানেক উত্তেজনা চলে। একপর্যায়ে তাঁরা উপপরিচালকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য চাপ দেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার নেতারা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।

এ সময় কৃষকদের কাছে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে কৃষকেরা ওই কর্মকর্তাকে কৃষকবান্ধব বলে দাবি করেন। একপর্যায়ে সেখানে ছাত্র-জনতাসহ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পৌঁছান এবং কৃষকদের কার্ড দেখতে চাইলে ধীরে ধীরে তাঁরা খামারবাড়ি ছাড়েন। এর মধ্য দিয়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকসহ কর্মকর্তারা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক আসলাম অর্ক প্রথম আলোকে বলেন, কৃষক পরিচয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আমাকে জানিয়েছেন, কী জন্য এসেছে তারা জানে না। এমনকি ঝিনাইদহ থেকেও কয়েকজন এসেছে।’