কিশোরগঞ্জ-৬ আসন

আ.লীগে নির্বাচনী আমেজ

ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৬। এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান।

কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র
কিশোরগঞ্জ জেলার মানচিত্র

ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৬। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন নিয়ে এই আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও নারীনেত্রী আইভি রহমানের ছেলে।

গত নির্বাচনগুলোয় নাজমুল হাসান ছিলেন একক মনোনয়নপ্রত্যাশী। এবারও দল থেকে তিনি-ই মনোনয়ন পাচ্ছেন—এমন বিশ্বাসের বাইরে কেউ নেই। তাঁকে ঘিরে এরই মধ্যে আওয়ামী শিবিরে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।

এদিকে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি এ ক্ষেত্রে নিজেদের কার্যক্রম খুব বেশি প্রকাশ্যে আনছে না। বলা যায়, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সভা–সমাবেশ করা থেকে বিরত রয়েছে দলটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে নাজমুল হাসান মাঠপর্যায়ে প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। চলতি মাসে কেবল ভৈরব উপজেলার সাতটির মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নে ৩৩টি পথসভা করেছেন। অপর নির্বাচনী এলাকা কুলিয়ারচরেও সমান গুরুত্ব দিয়ে দল গুছানোর চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। প্রতিটি সভা থেকে উন্নয়নের বিশদ বিবরণ তুলে ধরে তিনি নিজের জন্য দোয়া ও ভোট চাচ্ছেন। নাজমুল হাসানের বাড়ি ভৈরবে।

ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন নাজমুল হাসান এবং তিনি মনোনয়ন পাবেন—এই ইস্যুতে আমাদের কারও এতটুকু সন্দেহ নেই। এ কারণেই আগস্ট মাসের শুরু থেকেই নেতাকে ঘিরে আমাদের নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এবারও দলটির একক মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম। এর আগে তিনি তিনটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পাননি। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি নাজমুল হাসানের সঙ্গে বড় ভোট ব্যবধানে হারেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে সংশয় নেই—এমন ধারণা সবার। শরিফুল আলমের বাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলায়।

নিজেদের আড়াল করে রাখার কারণ জানতে কথা হয় ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় বিএনপির সভা হয় আর আমাদের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হন নিজ এলাকা থেকে। সতর্ক চলার পরও আমরা সুরক্ষিত নই। এই অবস্থায় নিজেদের আড়াল করেই এগোতে হচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬১৪। এই আসনে আওয়ামী লীগের ভীত শক্ত। স্বাধীনতা–পূর্ব সময় থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করেছেন মো. জিল্লুর রহমান। তিনি সাতবার নির্বাচন করে ছয়বার জয় পান। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর এই আসন থেকে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান।

নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের গণ–অভিযোগ, তিনি এলাকায় আসেন কম। সাধারণ জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ভৈরবকে জেলা করতে না পারার আক্ষেপ আছে ঘরে ঘরে। তবে তিনি কোনো মানুষের ক্ষতির কারণ নন—এই সত্য এখন প্রতিষ্ঠিত। স্থানীয় অনিয়ম–দুর্নীতির থেকেও তিনি সমান দূরত্ব বজায় চলেন।

মুঠোফোনে চেষ্টা করেও নাজমুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভৈরব ও কুলিয়ারচরে দলীয় রাজনীতিতে একক নিয়ন্ত্রণ শরিফুল আলমের। কর্মীদের সুখ–দুঃখে পাশে থাকার পরীক্ষিত নেতা হিসেবে পরিচিত তিনি। শরিফুলকে বিজয়ী করতে না পারার অতৃপ্তি গুছাতে এবার মরিয়া দলটির সবাই।

শরিফুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী পুলিশি প্রটোকল নিয়ে গণসংযোগ করছেন। আর আমি গণসংযোগের কথা ভাবলেই অপরাধ। মাঠের পরিবর্তে ঠিকানা হবে কারাগার। সেই কারণে মাঠে আছি রয়েসইয়ে।’