বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকার উত্তরায় কারখানামালিকের বাড়ি ঘেরাও করে আন্দোলন করছেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ির সামনে এ আন্দোলনে নামেন তাঁরা। বিকেল সাড়ে চারটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আন্দোলনকারী শ্রমিকেরা গাজীপুরের টঙ্গীর খাঁ পাড়ার ‘সিজন ড্রেসেস লিমিটেড’ কারখানার। কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় ২ হাজার ৪০০ শ্রমিক। কারখানার মালিক মো. বাকের চৌধুরী উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাসায় থাকেন। কারখানাটিতে গত মে মাসের অর্ধেক ও জুনের পূর্ণ বেতন বাকি। কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করছে না বা কারখানা ঠিকমতো পরিচালনা করছে না, এমন দাবিতে আজ সকাল থেকে কারখানামালিকের বাড়ি ঘেরাও করে আন্দোলন করছেন শ্রমিকেরা।
কয়েকজন শ্রমিক বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার আগে মে মাসের বেতন–ভাতা নিয়ে গড়িমসি করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। শ্রমিকেরা আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে মে মাসের অর্ধেক বেতন পরিশোধ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ঈদের ছুটি শেষে গত ২৬ জুন কারখানা খোলা হয়। কিন্তু তারপরও কারখানায় আসছেন না কারখানামালিক বা কর্তৃপক্ষের কেউ। শ্রমিকদেরও কোনো কাজ দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। কয়েক দিন ধরেই বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার সামনে আন্দোলন করেন শ্রমিকেরা। কিন্তু তারপরও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি।
একপর্যায়ে আজ সকাল থেকে কারখানামালিকের বাড়ি ঘেরাও করেন তাঁরা।
দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, উত্তরার জমজম টাওয়ারের পাশেই ১৩ নম্বর সেক্টর। এখানে ১৩ নম্বর সড়কের ৮০ নম্বর বাসার সামনে অবস্থান করছেন কয়েক শ শ্রমিক। শ্রমিকেরা বাসাটির সামনে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। স্লোগান দিচ্ছেন। কিন্তু বাসা থেকে সাড়া মিলছে না কারখানামালিকের। শ্রমিকদের এলোমেলো অবস্থানের কারণে যান চলাচলেও দেখা দিচ্ছে সমস্যা।
কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানাটিতে আমরা প্রায় ২০০ জন স্টাফ (কর্মকর্তা) রয়েছি। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদেরও মে ও জুনের পূর্ণ বেতন ও ঈদ বোনাস বাকি। বেতন না পেয়ে আমাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বেতনের দাবিতে কয়েক দিন ধরেই কারখানার সামনে আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু তারপরও বেতন পরিশোধের বিষয়ে কারখানার মালিকপক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আজ কারখানামালিকের বাড়ি ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু তবু মালিকপক্ষের কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাই আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা বকেয়া বেতনের নিশ্চয়তা পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এভাবেই বাড়ির সামনে অবস্থান করব।’
এ বিষয়ে কারখানার মালিক বাকের চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা মে মাসের ১৫ দিনের বেতন পাবে। আমি বলেছি, আমি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছি। ব্যাংক থেকে লোন (ঋণ) নিয়ে আগামী ১০ বা ১১ তারিখের দিকে ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করব। আর জুনের বেতন দিব জুলাইয়ের শেষের দিকে। কিন্তু তারা এটা মানছেই না। তাদের দাবি, জুলাইয়ের ৭ তারিখের মধ্যেই সব পাওনা পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে তারা আমার বাড়ির সামনে অবস্থান করছে। তবে বেশির ভাগ শ্রমিকেরাই ভালো, আমার অর্থনৈতিক সংকট বুঝতে পেরেছে। কিন্তু একটি পক্ষ শ্রমিকদের উসকে দিয়ে এ আন্দোলন করাচ্ছে। তারা গায়ের জোরে কারখানার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বি এম ফরমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানামালিকের বাড়ির সামনে অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে বিজিএমইএ ও মালিকপক্ষের লোকজন কথা বলছে। আমরা এ বিষয়ে নজরদারি করছি।’