স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণ

জাহাঙ্গীরনগরে ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত, তিনজনই ছাত্রলীগের নেতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থীর সনদ স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা। এ ছাড়া তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। দুজনকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিন্ডিকেট সভা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিন্ডিকেটের সভাপতি উপাচার্য নূরুল আলম এসব সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।

ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সনদ স্থগিদ এবং ক্যাম্পাসে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী ৪৫তম ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মো. হাসানুজ্জামানকে। একই ভূমিকায় আরেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ৪৪তম ব্যাচের শাহ পরানের সনদও স্থগিত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ভুক্তভোগী নারীর স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রাখায় সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের মুরাদ হোসেন, অভিযুক্ত মোস্তাফিজুরকে পালাতে সহায়তাকারী ৪৬তম ব্যাচের এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মো. সাব্বির হাসানের (সাগর) সনদ স্থগিতের পাশাপাশি তাঁদের সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ–আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, শাহ পরান সহসভাপতি, মুরাদ হোসেন সহসম্পাদক এবং সাব্বির হাসান কার্যকরী সদস্য। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী। সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।

উপাচার্য সাংবাদিকদের জানান, গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও হলসংলগ্ন এলাকায় বহিরাগত দম্পতির সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বহিরাগত মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিত করাসহ ক্যাম্পাসে তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির সুপারিশের জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, সিন্ডিকেট সভায় আবাসিক হলে অবস্থানরত অবৈধ শিক্ষার্থীদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ ওই সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্রবেশ নিষেধ, ভাসমান দোকানপাট সরিয়ে দেওয়া ও ক্যাম্পাসে অনুমোদনহীন অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী নারী ও তাঁর স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ভাড়া থাকতেন মামুনুর রশিদ। ঘটনার আগে মুঠোফোনে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে মামুন জানান, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে তাঁর পরিচিত মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন। তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্যাম্পাসে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ভুক্তভোগীর স্বামী ক্যাম্পাসে এসে হলের একটি কক্ষে মোস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে পরিচিত হন।

একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে জানান, সাভারের একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে তাঁরা কিছু টাকা পাবেন, তবে দোকানদার টাকা দিতে চাচ্ছেন না। ওই টাকার বিনিময়ে দোকানটি থেকে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বাসার জন্য টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ অন্যান্য আসবাব নিতে বলেন এবং সমপরিমাণ টাকা মামুনকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মামুন কিছুদিন ক্যাম্পাসে থাকবেন বলে জানান। এ জন্য কাপড়ের দরকার বলে জানান। ওই ব্যক্তিকে মামুন বলেন, তাঁর স্ত্রী যেন কাপড় নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন। স্বামীর নির্দেশ পেয়ে ওই নারী রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসে আসেন। ভুক্তভোগীর স্বামী, মামুন, মোস্তাফিজ ও মুরাদ মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আসেন। একপর্যায়ে মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে ফেলেন ও মারধর করেন। পরে মোস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলসংলগ্ন বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করেন।