কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালীতে নিধন করা সেই ১০ একরের পাহাড়ে বনায়ন করছে বন বিভাগ। পরিবেশবাদীদের দাবির মুখে বন বিভাগ ইতিমধ্যে কাটা পাহাড়ে শিমুল, কদম, জারুল, অর্জুন, আকাশমণি, কড়ই, বহেরা, ইপিলসহ বিভিন্ন প্রজাতির চার হাজার গাছের চারা রোপণ করেছে।
গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বনকর্মীদের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওবায়দুল করিম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ২০-২৩ জনের একাধিক সিন্ডিকেট আনুমানিক ১০ একরের বনাঞ্চল উজাড় ও পাহাড় নিধন করে। সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ২৮টি মামলা হয়েছে।
এর আগে পিএমখালীতে ১০ একরের সরকারি পাহাড় কেটে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট মাটি বিক্রির সত্যতা পায় পরিবেশ অধিদপ্তর। গত এক বছরে পিএমখালীর একাধিক সরকারি পাহাড় কেটে দেড় কোটি ঘনফুট মাটি বিক্রি করে ২৩ জনের একটি স্থানীয় চক্র। এই মাটির বাজারমূল্য (প্রতি ঘনফুট ৫০ টাকা ধরে) ৭৫ কোটি টাকা।
গত ৮ আগস্ট প্রথম আলোয় ‘সরকারি পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি বিচারকের নজরে আসে। গত ১১ আগস্ট ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন পরিবেশ আদালত কক্সবাজারের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম। পিএমখালীতে সংরক্ষিত পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত, পাহাড়ে কী পরিমাণ মাটি কাটা অথবা বিক্রি হয়েছে, তা নিরূপণ করে পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন বিচারক। এ বিষয়ে ২৫ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার উপপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে আমরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। পাহাড় কাটা এবং বালুর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ২৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিএমখালী ইউনিয়নের তাজমহলের ঘোনা, ঘোনারপাড়া, ছনখোলা ও পশ্চিম পাড়া এলাকায় ১০ একরের পাহাড় কেটে ডাম্পার ট্রাকে করে ২৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ জনের সিন্ডিকেট গত এক বছরে ১০ একর সংরক্ষিত বনের পাহাড় কেটে কমপক্ষে দেড় কোটি ঘন ফুট মাটি বিক্রি করে। ডাম্পার ট্রাকে এসব মাটি অন্যত্র সরবরাহ করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ পাহাড়খেকো হলেন পিএমখালীর ওবায়দুল করিম, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার নাছির উদ্দীন, খুরুশকুল তেতৈয়ার হেলাল উদ্দিন, পিএমখালীর আবদুল্লাহ, মাহমুদুল করিম, মো. মামুন, জাহাঙ্গীর আলম, মো. জোসেফ, তাজমহল, কায়েস সিকদার, রামুর খুনিয়াপালংয়ের নুরুল কবির, পিএমখালীর লুৎফুর রহমান, সোনা আলী, মো. কাজল, মনিরুল ইসলাম, খুরুশকুলের নাছির উদ্দিন, পিএমখালীর মো. সোহেল, মো. সিরাজ, শাহজাহান, মো. হারুন, মোস্তাক আহমদ, নুরুল আমিন ও আবদুল কাদের।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’–এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, বন বিভাগের এক কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রকাশ্যে আনুমানিক ২০ হাজার গাছ কেটে প্রায় ১০ একর আয়তনের পাঁচ-ছয়টি পাহাড় কেটে নেয় পাহাড়খেকো চক্র। তাঁদের দাবির মুখে পাহাড় কাটা বন্ধ করে সেখানে বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।