জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। গত ১৫ বছরে এ সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। দুটি দেশই গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য সবার কাছে সমাদৃত। দেশ দুটি একসঙ্গে ও একযোগে কাজ করলে সমান লাভবান হবে।
সিলেটে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা বাংলাদেশের মানুষ ভোলেনি। বাংলাদেশ সরকার ও দেশের মানুষ সেটি সব সময় স্মরণ করে। আমরা বিশ্বাস করি, দুই দেশ একসঙ্গে একে অপরের সহযোগিতা করলে “কমন এনিমি” দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়তে পারব। সে সঙ্গে দুই দেশের জনসাধারণের উন্নতি করা সম্ভব। এমন সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের চ্যালেঞ্জ এবং সেটি মোকাবিলার পথ বের হবে। আমরা বলতে চাই, আমরা আরও ভালো করব যখন একসঙ্গে কাজ করব।’
সংলাপে উভয় দেশের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হবে। ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে।
সিলেট শহরতলির বিমানবন্দর এলাকার অভিজাত হোটেল গ্র্যান্ড সিলেটে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ভারতের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ভিনসেন্ট পালা, ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি এবং আইসিটি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুনের সঞ্চালনায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান এ এস এম সামছুল আরেফিন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, দুই দেশের মধ্যে কোনো ঝামেলা মেটাতে একটি ফোনকলই এখন যথেষ্ট। সেখানে ঝামেলা মেটাতে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এ ধরনের সংলাপের ফলে খোলামেলা আলোচনা করা সম্ভব হয়। ফলে আমাদের কী কী কাজ করলে সম্পর্কের আরও উন্নতি হবে, কোথায় প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো আমরা বুঝব।’
ভারতের সাবেক সংসদ সদস্যের মন্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশও স্টেটমেন্টে বিশ্বাস করে না। ফোনকলে বেশি বিশ্বাসী এবং ফোনকলেই সমস্যা শেষ করতে চাই।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সংলাপের মাধ্যমে উভয় দেশের সমস্যাগুলো আলোচনায় আসবে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে ভারতের উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে। দেশ থেকে এ পর্যন্ত ২৮ লাখ লোক ভারতে বেড়াতে গেছেন। যার ফলে সম্পর্কের আরও উন্নতি হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভারতের ভিসা পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে ভিসামুক্ত যেতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সংলাপে উভয় দেশের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা হবে। ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে শুধু কূটনৈতিক নয়, সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে একসঙ্গে দুই দেশ কাজ করছে। বড় সমস্যাগুলোর আলোচনার মধ্যে সমাধান হচ্ছে। উভয় দেশ সম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্য-সংস্কৃতির উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তার ব্যাপারে নীতিগতভাবে বাংলাদেশ-ভারত একমত। কিছু কারণে আটকে আছে। সেটি সময়মতো সমাধান হয়ে যাবে।