যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের দিনমজুর হাবিবুর রহমান। রোজগারের একমাত্র সম্বল ঘোড়া হারিয়ে দিশেহারা তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামের দিনমজুর হাবিবুর রহমান। রোজগারের একমাত্র সম্বল ঘোড়া হারিয়ে দিশেহারা তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে

আয়ের একমাত্র সম্বল ঘোড়াটি হারিয়ে দিশেহারা দিনমজুর হাবিবুর

ঘোড়ার গাড়িতে ধান-চাল পরিবহন ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন হাবিবুর রহমান (৪০)। ওই আয় দিয়েই তাঁর পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। সম্প্রতি ঘোড়াটি গর্ভবতী হয়ে গেলে বিপাকে পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে ১৫ দিন আগে ৬০ হাজার টাকা ধার করে একটি ঘোড়া কেনেন। ওই ঘোড়া দিয়ে গাড়িতে বোরো ধান পরিবহন করছিলেন তিনি। রাতে বাড়ির পাশে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন। কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে ঘোড়াটি হারিয়ে গেছে। এখন রোজগারের একমাত্র সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

গত সোমবার রাতে ঘোড়াটি হারিয়ে যায়। তিন দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে খুঁজেও ঘোড়াটির সন্ধান পাননি। হাবিবুর রহমানের বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে।

হাবিবুর রহমান জানান, তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। দুই বছর আগে ধারদেনা করে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কেনেন। ওই ঘোড়া দিয়ে তিনি চাষের জমিতে মই দেন। এ ছাড়া ঘোড়ার গাড়িতে ধান-পাটসহ পণ্য পরিবহন করেন। এই আয়ে তাঁর সংসার চলে। সম্প্রতি ঘোড়াটি গর্ভবতী হয়ে গেলে তাঁর রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। উপায়ান্তর না পেয়ে এলাকার কয়েকজনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ১৫ দিন আগে একটি ঘোড়া কেনেন। ঘোড়াটি দিয়ে গাড়িতে তিনি খেত থেকে বাড়িতে বোরো ধান পরিবহনের কাজ করছিলেন। এতে কোনো দিন পাঁচ শ, কোনো দিন এক হাজার টাকা আয় হচ্ছিল।

হাবিবুর প্রথম আলোকে বলেন, গত সোমবার রাতে বাড়ির পাশে একটি গাছে ঘোড়াটি বেঁধে রাখা ছিল। ওই সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে রাত পর্যন্ত ঝড়–বৃষ্টি হয়। পরে ঘরের বাইরে এসে দেখেন, গাছে বাঁধা দড়ির কিছু অংশ পড়ে আছে। কিন্তু ঘোড়া নেই। ওই রাত থেকে তিন দিন ধরে ঘোড়াটি আশপাশের কয়েকটি গ্রামে খুঁজেছেন। কিন্তু কোথাও সন্ধান পাননি।

আট শতক জমির ওপর হাবিবুরের ছোট্ট একটি ঘর। ঘরের ছাউনি ও বেড়া টিনের। স্ত্রী ও তিন মেয়ে নিয়ে হাবিবুরের সংসার। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন। ছোট মেয়েটি বাঘুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে।

হাবিবুর রহমান আরও বলেন, ‘সম্পূর্ণ ধারকর্জ করে ঘোড়াটি কিনেছিলাম। এখনো একটি টাকাও পরিশোধ করতে পারিনি। এই অবস্থায় ঘোড়াটি দড়ি ছিঁড়ে হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ঘোড়াটি আমার আয়ের একমাত্র সম্বল। আমার সব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কী খাব, কীভাবে দেনার টাকা দেব, মাথায় কিছু কাজ করছে না।’