চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম নগরের আংশিক) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। একই আসনে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের একটি তালিকায়ও রয়েছে তাঁর নাম।
মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত। সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ না করেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গত রোববার চিঠি দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সীতাকুণ্ড উপজেলার মোট ৯২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আগামী রোববার নিয়োগপ্রাপ্ত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের একটি তালিকা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেই তালিকায় স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে রকেট প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম রয়েছে।
মোহাম্মদ সালাউদ্দিন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেওয়ার আগে পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালে পুলিশ বাহিনী থেকে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১১ সালে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। তখন থেকেই তিনি সেখানে কর্মরত রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় সালাউদ্দিন নিজেকে ওষুধ ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছেন। তিনি যে সরকারি চাকরিজীবী, সে বিষয়টি তিনি গোপন করেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে বিষয়টি ধরা পড়েনি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জমা দেওয়া ১ শতাংশ ভোটারের তালিকায় ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে তিনি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। সেখানেও তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ বহাল থাকে। পরে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান সালাউদ্দিন। গত শুক্রবার উচ্চ আদালতের আদেশের কপি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেন তিনি। এরপর তাঁকে শনিবার রকেট প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের ওই তালিকাটি যখন পাঠানো হয় তখনো সালাউদ্দিন প্রার্থী হননি। তাই তাঁর নাম রাখা হয়েছে। তবে বিষয়টি নজরে আসার পর তাঁর নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে বলা হয়েছে।
নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, বেশ কিছুদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় গত ১১ নভেম্বর ও ১৮ ডিসেম্বর দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় সালাউদ্দিনকে। সর্বশেষ গত রোববার তাঁকে তৃতীয়বারের মতো কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত সালাউদ্দিন কোনো নোটিশের জবাব দেননি।
সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তথ্য গোপন করে সালাউদ্দিন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বিষয়টি সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে গত রোববার লিখিতভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে জানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রকেট প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি সাড়া দেননি।
জানতে চাইলে সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাপ্ত তালিকা থেকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে ভোট গ্রহণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।