১৫ বছর বয়সে জাহানারার বিয়ে হয় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে বগুড়া শহরে এসে থিতু হওয়া আবুল কাশেমের সঙ্গে। কখনো কারখানার শ্রমিক, কখনো দিনমজুরি, আবার কখনো ভ্যান চালিয়ে জীবিকা চালাতেন তিনি। সংসারে কিছুটা অভাব–অনটন থাকলেও সুখ ছিল। তবে সেটা আর থাকল না। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বছর দেড়েক আগে মারা যান কাশেম। রেখে যান ১১ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে। মেয়েকে নিয়ে খেয়ে–পরে বেঁচে থাকতে জাহানারা স্বামীর রেখে যাওয়া ভ্যানগাড়ি নিয়ে পথে নামেন।
তবে নারী চালক হওয়ায় জাহানারার ভ্যানে যাত্রী মিলত না। শেষে ভ্যান ঠেলে শহর ঘুরে ফুটপাতে ফেলনা কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙা ইট, পুরোনো লোহা কুড়ানোর পেশা বেছে নেন। কুড়িয়ে পাওয়া ফেলনা বাড়িতে নিয়ে পরিষ্কার করার পর তা বিক্রি করেন ভাঙারির দোকানে। দিন শেষে জোটে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এ দিয়ে চলে মা–মেয়ের সংসার।
জাহানারার বয়স এখন ৪৮ বছর। বগুড়া শহরতলির রাজাপুর গ্রামে ৬০০ টাকায় ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে। ফুটপাতে কুড়ানো প্লাস্টিকের বোতল-কাগজ বিক্রি করে যে টাকা পান, তা দিয়ে চালসহ নিত্যদিনের জিনিস কেনেন। জাহানারা বলেন, জিনিসের দাম বাড়ায় কুলাতে পারছেন না। ঘরভাড়ার টাকা দিতে পারেন না। কয়েক মাসের ঘর ভাড়া বাকি পড়েছে। অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা করতে গিয়ে কিছু ধারদেনাও হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাহানারা বেগমের সঙ্গে কথা হয় বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকায়। সকাল থেকে ভ্যান চালিয়ে শহর ঘুরে কিছু পুরোনো নোংরা পলিথিন, পুরোনো বোতল আর ভাঙা কিছু লোহালস্কর কুড়িয়েছেন তিনি। জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘরত অসুস্থ মেয়ে। ডাকতার দেকাপার পারি না। চিকিৎসা করাবারও পারি না। মাস যায়, বছর যায়, ওর পাতত একনা গরুর গোশতও তুলে দিবার পারি না। পাতত ভাতই জোটে না। মাছ-মাংস কিনার টেকা পামো কুন্টি? ভ্যানগাড়ি ঠেলে পথে পথে ঘুরে কাগজ কুড়াতে কষ্ট হয়। মেয়ের মুখে চারডা ভাত তুলে দিতে এত কষ্ট করি। প্রতিবন্ধী ভাতাডাও পাই না। সরকারি সুযোগ–সুবিধা পাই না। দ্যাশের ম্যালা মানুষ প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার পাচ্চে। হামাক এডা ঘর দিলে বোবা মেয়েটাক লিয়ে মাথা গোঁজার এনা ঠাঁই হতো।’
বিসিক বাজারের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাহানারাকে এ এলাকার সবাই চেনে। তবে তাঁর খবর কেউ রাখে না।