মনোনয়নপ্রত্যাশী নয়জনই মাঠে তৎপর। তাঁদের একজন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি। বাকিরা দলটির পদধারী নেতা।
আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন নয়জন। তাঁদের সবাই মাঠে তৎপর আছেন। তাঁদের একজন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি। বাকিরা দলটির পদধারী নেতা। এত অধিকসংখ্যক সম্ভাব্য প্রার্থীর ছড়াছড়িতে তৃণমূলের কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে দলে বিভক্তি বাড়ছে।
সিলেট আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০২ সালে এই সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালের ১৫ জুন মারা যান তিনি। এরপরই মেয়র পদে প্রার্থী হতে দলের অনেকে তৎপর হন।
‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। তাই স্বাভাবিক কারণেই মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। এতে একেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর পেছনে নেতা-কর্মীরাও ভাগ হয়ে তৎপর আছেন।মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে সবচেয়ে বেশি তৎপর ছিলেন। এবার তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে চান। তবে গত ২২ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দেশে ফিরে জানান, মেয়র পদে নির্বাচন করতে তিনি দলীয় উচ্চপর্যায়ের ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেয়েছেন।
এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অপর নেতারাও প্রার্থিতা ঘোষণা করে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান ওরফে জেবুল ও আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান আহমদ শিপলু ও সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান চৌধুরী। এর বাইরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সদস্য মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিমও মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, প্রবাসী বনাম দেশি প্রার্থী—সিলেট আওয়ামী লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। গত জানুয়ারির আগে মূলত সিলেটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাই মেয়র পদে প্রার্থী হতে তৎপর ছিলেন। তবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রার্থিতা ঘোষণার পর জোরেশোরে মাঠে নামায় আচমকাই পরিবেশ পাল্টে যায়।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন। কাল সোমবার তাঁর দেশে ফেরার কথা। গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত সিটি নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি। এবারও মনোনয়ন চেয়েছি। স্থানীয়ভাবে দলে যাঁরা ত্যাগ ও সততার রাজনীতি করছেন, এমন কাউকেই প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্র মূল্যায়ন করুক, এটাই সবার প্রত্যাশা।’
তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলছেন, ‘আমি এই শহরেই ছাত্ররাজনীতি করে বড় হয়েছি। এখন দেশে-বিদেশে রাজনীতি করছি। রাজনীতির বাইরের মানুষ তো নই। এ ছাড়া গত সিটি নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই শহর এবং শহরতলিতে আমি দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে গণসংযোগ করেছি।’
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, মেয়র পদে একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে দলীয় কোন্দল ক্রমে প্রকট হয়ে উঠছে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ছাড়া নেতৃস্থানীয়দের কেউ পাশে নেই। তবে তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মীই রয়েছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দলে বিভক্তি বেড়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। তাই স্বাভাবিক কারণেই মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি। এতে একেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর পেছনে নেতা-কর্মীরাও ভাগ হয়ে তৎপর আছেন।
এটা স্বাভাবিক ঘটনা। তবে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাঁকেই প্রার্থী দেবেন, তাঁর পক্ষেই সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। এখানে কোনো বিভেদ কিংবা বিভক্তির সুযোগ নেই।’
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন।