নরসিংদীর রায়পুরায় গণসংযোগের সময় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়াকে পিটিয়ে হত্যার ৭০ ঘণ্টা পর দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা মামলা, অন্যটি দ্রুত বিচার আইনে করা মামলা। আজ শনিবার বেলা দুইটার দিকে রায়পুরা থানায় মামলা দুটি করা হয়। এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়েত হোসেন।
হত্যা মামলার বাদী নিহত সুমন মিয়ার বাবা উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন। এতে ২৬ জনের নামে উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। দ্রুত বিচার আইনে করা মামলার বাদী সংসদ সদস্য রাজিউদ্দীন আহমেদের ছেলে রাজীব আহমেদ। এতে ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুমন মিয়ার প্রতিপক্ষ চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান ওরফে রুবেলকে।
মামলা দুটির বিষয় নিশ্চিত করে রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন বলেন, দুটি লিখিত অভিযোগই মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
নিহত সুমন মিয়া উপজেলার চরসুবুদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের ছেলে। তিনি অ্যাগ্রো ফার্ম, পোলট্রি ফিড, মাছের খামারের ব্যবসা করতেন। নরসিংদী শহরের সাটিরপাড়া এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। বিয়ের ১৬ বছর পর তাঁর স্ত্রী লিজা আক্তারের গর্ভে যমজ বাচ্চা এসেছে, রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি অস্ত্রোপাচারের অপেক্ষায় রয়েছেন। অনাগত দুই সন্তানকে দেখে যেতে পারলেন না নিহত সুমন মিয়া।
হত্যা মামলার বাদী ও নিহত সুমন মিয়ার বাবা নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা করেছি। এখন দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই। শুধু রাজনৈতিক কারণে আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বিচার দেখে যেতে চাই।’
নিহত ব্যক্তির স্বজন, অনুসারী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী লায়লা কানিজের সঙ্গে যৌথভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পাড়াতলী গিয়েছিলেন।
যাওয়ার পথে বেলা দেড়টায় পাড়াতলীর মীরেরকান্দি এলাকায় অপর ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান রুবেলের মুখোমুখি হন। ওই সময় আবিদ হাসান বিভিন্ন কথা বলে সুমনকে উসকানি দেন। একপর্যায়ে অতর্কিতে আবিদসহ তাঁর উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকেরা দুটি গাড়ি (প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস) ভাঙচুর শুরু করলে সুমনের দেহরক্ষী লুৎফর গাড়ির ভেতর থেকে শটগান বের করে ফাঁকা গুলি করেন। এরপরই আবিদের শত শত কর্মী-সমর্থক সুমনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মাথায়, নাকে, মুখে উপর্যুপরি আঘাতে রক্তাক্ত করেন। ভয়ে আতঙ্কে সুমনের কর্মীরা একেকজন একেক দিকে পালিয়ে যান।
একাই রক্তাক্ত অবস্থায় জমির আল ধরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ে পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের পুলিশ ক্যাম্পে পৌঁছান সাড়ে তিনটায়। ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ঘটনা রায়পুরা থানার ওসিকে জানালে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু খবর পেয়ে আবিদ হাসানের কর্মী-সমর্থকেরা হাসপাতালের গেটে মিছিল নিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখেন। পরে ওসি নিজে সেখানে গিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্স ছাড়িয়ে নিয়ে বাঁশগাড়ী রওনা হন। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পুলিশ বাঁশগাড়ী ফাঁড়ি থেকে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে সুমনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দুই মামলার প্রধান আসামি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসানের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তিনি এলাকাছাড়া। তাঁর বাড়িতে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি।
দ্রুত বিচার আইনে করা মামলার বাদী সংসদপুত্র রাজীব আহমেদ বলেন, ‘পাড়াতলীতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আবিদ হাসান রুবেলের নেতৃত্বে আসামিরা উপজেলা অডিটরিয়ামে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমরা নেতা–কর্মীদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছি। সব আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।’