গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু

ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষা

১৮ আগস্ট ভোরে দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের মধ্যে তাঁদের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে।

শিক্ষক দম্পতি এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরে প্রাইভেট কার থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের পর তিন সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনা তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। সিআইডি থেকে এখনো ভিসেরা প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি। এতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও প্রস্তুত করা যাচ্ছে না। এসব কারণে তাঁদের মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারছে না পুলিশ।

১৮ আগস্ট ভোরে দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকায় প্রাইভেট কারের ভেতরে এ কে এম জিয়াউর রহমান (৫১) ও মাহমুদা আক্তার ওরফে জলি (৩৫) দম্পতির লাশ পাওয়া যায়। জিয়াউর গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাহমুদা টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ঘটনার পরদিন নিহত শিক্ষকের ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে গাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাড়িতে নিহত দম্পতির জন্য মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করেন স্বজনেরা।

তদন্তকাজে হতাশা প্রকাশ করে আতিকুর বলেন, ‘ঘটনার শুরু থেকে সপ্তাহখানেক পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন পুলিশের কাছে জানতে চাইলেই বলে, “আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” প্রায় ২৫ দিন হয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। সেই কারণেই নাকি পুলিশ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এত দিন হয়ে গেলেও ছোট ভাই এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ জানতে পারছি না। যার কারণে আমরাও খুব হতাশার মধ্যে রয়েছি।’

ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়া প্রসঙ্গে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন প্রথম আলোকে বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন আসতে সাধারণত তিন মাস সময় লাগে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিষয়ে পুলিশ চাইলে সাত দিনের মধ্যেই ভিসেরা প্রতিবেদন আনা সম্ভব। পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে, সিআইডিতে আবেদন করার জন্য। ভিসেরা প্রতিবেদন ছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টঙ্গীর পাশাপাশি এলাকায়। প্রতিদিন তাঁরা প্রাইভেট কার নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। গাড়িটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন। গত ১৭ আগস্ট সকালে তাঁরা স্কুলে যান এবং কাজ শেষে সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি। পরদিন ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইকুল এলাকা থেকে তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরের মধ্যে নিহত দম্পতির সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁদের শরীরের কিছু নমুনার ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য রাজধানী ঢাকায় সিআইডিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার ২৪তম দিন গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রতিবেদন আসেনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাদির-উজ-জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবারও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকায় সিআইডিতে কথা বলেছেন, দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। সেই প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে কী হয়েছিল বা কীভাবে তাঁরা মারা গেছেন। তখন মুভ করা যাবে সেই দিকে। এমনিতে আমরা যাঁকে যাঁকে সন্দেহ করেছি, তাঁদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ক্লু আসেনি। তাঁদের স্বজনদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ফল আসেনি।