ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে এ কে আজাদসহ ১০ নেতাকে অব্যহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলি মহল্লায় এ কে আজাদের বাসভবনে
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে এ কে আজাদসহ ১০ নেতাকে অব্যহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলি মহল্লায় এ কে আজাদের বাসভবনে

সংবাদ সম্মেলন

‘এ কে আজাদের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে শামীম হক অবৈধ অব্যাহতিপত্র দিয়েছেন’

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে এ কে আজাদসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলি মহল্লায় এ কে আজাদের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অব্যাহতি পাওয়া ওই ১০ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিপুল ঘোষও উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ কে আজাদসহ জেলা আওয়ামী লীগের ১০ পদধারী নেতাকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেন। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করা ও ২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভায় অনুপস্থিত থাকার কারণ দেখিয়ে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

অব্যাহতি পাওয়া নেতারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ, কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা, মনিরুল হাসান, আবুল বাতিন ও শহীদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে আজাদ, খলিফা কামাল উদ্দিন ও শাহ আলম।

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চরমে রয়েছে। ৭ জানুয়ারির ভোটে এই দুজনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা জানাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে নৌকার প্রার্থী শামীম হক স্বতন্ত্র প্রার্থীর জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে নিজের দলীয় সভাপতি পদের অপব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েলের কৌশল নিয়েছেন বলে দাবি করছেন অব্যাহতি পাওয়া নেতারা, যা শামীম হকের অবৈধ তৎপরতা বলেও অভিহিত করেছেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে এ কে আজাদের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক বিপুল ঘোষের স্বাক্ষরিত বক্তব্য পড়ে শোনান শওকত আলী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আপনারা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন যে একটি অব্যাহতিপত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, যার মধ্যে ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদসহ জেলা আওয়ামী লীগের ১০ জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও হাস্যকর। প্রথমত, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির কোনো পর্যায়ের কোনো সদস্যকে সরাসরি অব্যাহতি দিতে পারে না। কোনো সদস্য অপরাধ করলে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করতে হবে। তারপর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সভায় দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অব্যাহতির জন্য শুধু সুপারিশ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগের সভা ব্যতিরেকেই এমন একটি অব্যাহতিপত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও অবৈধ। মূলত আমাদের প্রার্থী এ কে আজাদের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই এই অব্যাহতিপত্র প্রদান করেছেন।’

এ কে আজাদ ও শামীম হক (ডানে)

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্পষ্ট করে বলেছেন যে দলের যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে পারবেন, তাতে দোষের কিছু হবে না। যার ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কোনো কোনো জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। দেশের অন্য কোথাও অব্যাহতি প্রদানেরও কোনো নজির নেই। লক্ষণীয় যে, অব্যাহতিপত্রে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া এবং সালথা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেনের নাম নেই। এতে প্রমাণিত হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ফরিদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

লিখিত বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে ঘোষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এই অব্যাহতিপত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার পরিপন্থী বলেই প্রতীয়মান হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে এ কে আজাদ বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী সমাবেশ দেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ভীত হয়ে পড়েছেন। নিজেরা বিপর্যস্ত, এ জন্য তাঁরা নিজেরাই নিজেদের নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দিয়ে আমাদের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য থানায় যাচ্ছেন। এর মধ্যে ডিক্রির চর, কানাইপুরের ও ঈশান গোপালপুরের কয়েকটি জায়গা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঈশান গোপালপুরের আমাদের কয়েকটি ক্যাম্প তাঁরা ভেঙে দিয়েছেন। আমাদের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখিয়ে ভোটার উপস্থিতি কম করার চেষ্টা করছেন।’

শওকত আলী বলেন, ‘শামীম হক দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জেল থেকে বের করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন। এসব সন্ত্রাসীদের উৎখাত করে সুন্দর একটি ফরিদপুর তৈরি করতে চাই।’

বিপুল ঘোষ বলেন, ‘আমরা এখন ফরিদপুরে দুর্নীতির মহাসমুদ্রে বসবাস করছি। জনগণ ভোট দেবে সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। সদরের চণ্ডীপুরের মহন্তপাড়ায় নৌকার কর্মীরা ত্রাস সৃষ্টি করেছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, কোষাধ্যক্ষ যশোদা জীবন দেবনাথ, সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা প্রমুখ।