জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেছেন, ১৮ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা না করাটা খুবই কষ্টের। অথচ ড. জোহা ছিলেন বাঙালির প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। তাঁর আত্মাহুতি সেদিন বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছিল।
আজ শনিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ শামসুজ্জোহার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ডেপুটি স্পিকার এসব কথা বলেন।
শামসুল হক বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক ছাত্র ও ছাত্রনেতা হিসেবে ক্ষুব্ধ। কেননা, জোহা স্যারের মৃত্যুর এত বছর হয়ে গেলেও দিনটি কেবল এ ক্যাম্পাসেই পালিত হয়। জাতীয়ভাবে দিনটি এখনো স্বীকৃতি পায়নি। অথচ তাঁর আত্মাহুতি বাঙালির সংগ্রামে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছিল। এ ঘটনার পর গণ-অভ্যুত্থান দুর্বার রূপ ধারণ করেছিল। বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে। বাঙালিরা স্বাধীনতার আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়। অথচ জোহা দিবস এখনো জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক।’
বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় জোহা স্মারক বক্তৃতা। এতে ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞানশিক্ষা’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম লুৎফর রহমান।
আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক, বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম, প্রধান পৃষ্ঠপোষক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসান আহমদের সভাপতিত্বে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের দায়িত্বশীল শিক্ষক হতে হবে। আমরা যদি দায়িত্বশীল না হই, তাহলে ভালো শিক্ষক হতে পারব না, ভালো রাজনীতিবিদ হতে পারব না, ভালো কৃষক হতে পারব না। ড. শামসুজ্জোহা ছিলেন দায়িত্বশীল শিক্ষক। তিনি ১৯৬৯ সালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে বলেছিলেন, “আমি বলছি কোনো গুলিবর্ষণ হবে না। কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে যেন আমার গায়ে গুলি লাগে।” পাকিস্তানি বাহিনী কথা না শুনে গুলি করে এবং শামসুজ্জোহা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তাঁর সেই কথা তিনি রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছেন। শামসুজ্জোহা রক্ত দিয়ে স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’
শামসুল হক আরও বলেন, সবারই জোহা স্যারকে জানতে হবে এবং দায়িত্ব নিয়ে দিনটি পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা প্রত্যাশা রাখেন, আগামী বছর দিনটি সারা দেশে শ্রদ্ধাভরে পালিত হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ১৯৬৯ সালে ড. শামসুজ্জোহার আত্মত্যাগ দেশের পরবর্তী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করতে বিশেষ অবদান রাখে। তিনি ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জোহার আত্মত্যাগের দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণার দাবি জানান।
দিবসটির কর্মসূচিতে আরও আছে বাদ জোহর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও বিশেষ মোনাজাত, বিকেল চারটায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলে বিশেষ আলোচনা, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শহীদ জোহা চত্বরে প্রদীপ প্রজ্বালন ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শহীদ শামসুজ্জোহা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।