বাগেরহাটে নিহত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ভূঁইয়া ওরফে তানু ভূঁইয়াকে (৩৫) গুলি করা হয় একদম কাছ থেকে। এ সময় তিনি বাড়ির পাশের চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঠিক তখনই একই এলাকার ফরিদ (২৯) নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে পাঁচ থেকে আটজন হেঁটে এসে নূরে আলমের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে চড়থাপ্পড় দেন। এরপর তাঁর বুকে ও পেটে গুলি করে চলে যান। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার এক নিকটাত্মীয় প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন নূরে আলম। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে শহরের বাসাবাটি পদ্মপুকুরের মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নূরে আলম ভূঁইয়া বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি এলাকার আবদুর রব ভূঁইয়ার ছেলে। এর আগে তিনি জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই ব্যক্তি বলেন, বাসাবাটি পদ্মপুকুর চৌরাস্তার মোড়ে নূরে আলমের সঙ্গে থাকা দুজনকে ফরিদ ও তাঁর সঙ্গীরা চড়থাপ্পড় দিয়ে বলেন, ‘তোদের তো মারতে আসিনি, তোরা চলে যা।’ এরপর ফরিদ তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করে নূরে আলমকে তিন-চারটি গুলি করেন এবং হেঁটে চলে যান।
স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, গতকাল বিকেলে বাগেরহাট শহরতলির বৈটপুর এলাকার একটি মোড়ে বসে হত্যাকারীরা এই পরিকল্পনা করেন। পরে পিরোজপুরের নাজিরপুর থেকে তাঁরা অস্ত্র নিয়ে আসেন। সে অস্ত্র দিয়েই রাত পৌনে ১০টার দিকে নূরে আলমকে গুলি করেন ফরিদ।
আজ শনিবার দুপুর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তায় এখনো রক্তের দাগ আছে। পাশেই কয়েকজন পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। মোড়ের সব কটি দোকান বন্ধ। রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কম। যাঁরা চলাফেরা করছেন, তাঁরাও বেশ চুপচাপ। রাতে হত্যাকাণ্ডের বিষয় নিয়ে স্থানীয় কেউ কথা বলতে চাইছেন না।
গুলি করার স্থান থেকে ১০০ গজ দূরে নূরে আলমের বাড়ি। সেখানে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা এসেছেন। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাকাণ্ড। এর আগে ২০১৭ সালেও খুলনার আহসান স্যার ইকবাল রোডে নূরে আলমকে গুলি করেছিল দুর্বৃত্তরা।
নূরে আলমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা বলেন, রাত নয়টার দিকে তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন। কেউ একজন এসে বাইরে থেকে তাঁকে ডাকেন। পরে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার মোড়ের দিকে যান তাঁর স্বামী। এর বেশ কিছুক্ষণ পরে গুলির শব্দ পান তাঁরা। পরিবার ও স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা নূরে আলমকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘নূরে আলম ভূঁইয়া আন্দোলন ও সংগ্রামে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তাই পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’
পুলিশ বলছে, নূরে আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাদক, বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট আটটি মামলা আছে। তিনি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। অন্যদিকে হত্যার অভিযোগ ওঠা ফরিদের বিরুদ্ধেও হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা আছে।
আজ দুপুরে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে নূরে আলমের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার সমাদ্দার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নূরে আলমের শরীর থেকে তিনটি গুলি বের করা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা পুলিশের গণমাধ্যম শাখার সমন্বয়ক পরিদর্শক এস এম আশরাফুল আলম বলেন, ফরিদ নামের এক ব্যক্তি গুলি করেছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। ময়নাতদন্ত শেষে আজ দুপুরে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো নূরে আলমের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় অভিযোগ দেননি।