দুধকুমার নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নাগেশ্বরী উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামে
দুধকুমার নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে নতুন করে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নাগেশ্বরী উপজেলার মিয়াপাড়া গ্রামে

দুধকুমারের বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকছে লোকালয়ে

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় দুধকুমার নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এতে নতুন করে আরও ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। আজ রোববার সকালে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিব্বির আহমেদ দুধকুমার নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার পুরোনো বেড়িবাঁধটির দুটি স্থানে প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে যায়।

মিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দুধকুমার নদের পাড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু বাঁধটি নির্মাণে দেরি করায় বন্যার পানির তীব্র স্রোতে গতকাল বাঁধের দুটি স্থানে ভেঙে গিয়ে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গরু–ছাগল উঁচু জায়গায় রেখে এসেছেন। এভাবে পানি ঢুকতে থাকলে বাড়িতে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, দুধকুমার নদের যে স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে, সেটি মূলত পুরোনো একটি গ্রামীণ সড়ক। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সেখানে স্থায়ী বাঁধের প্রস্তাব আছে। এখনো জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। তাই বাঁধের কাজ শুরু করা যায়নি। গতকাল বন্যার পানি বেড়ে পুরোনো সড়কটির ১০০ মিটার জায়গা ভেঙে গেছে। সেখানে ২০০ জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৬৭ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর ৫৮ সেন্টিমিটার  ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, কয়েক দিন থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে দুধকুমার নদের পানি বেড়ে বাঁধে ধস দেখা দেয়। সময়মতো মেরামত না করায় এই বাঁধ ভেঙে যায়। গতকাল ভোরে বাঁধের একটি অংশ দিয়ে নদের পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। পরে বিকেলে তা ১০০ মিটার পর্যন্ত ভেঙে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে ঢুকে প্লাবিত হয়। প্লাবিত এলাকাগুলোর মধ্যে আছে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মিয়াপাড়া, মালিয়ানি, সেনপাড়া, তেলিয়ানীপাড়া, পাটেশ্বরী, বোয়ালের ডারা, অন্তাইপাড়, ধনিটারী, বিধবাটারী, বড়মানী, বামনডাঙ্গা, নাগেশ্বরী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাঞ্জুয়ার ভিটা, ভুষিটারী ও ফকিরটারী গ্রাম।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, শুক্রবার রাত থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ড বন্যাকবলিত হয়। শনিবার সকালে মিয়াপাড়া বেড়িবাঁধের দুটি স্থান বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এতে ১৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

ইউএনও সিব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বাঁধ ভাঙার বিষয়টি তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছেন। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তারা সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে।